কবির আহমদ, সিলেট: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন প্রবাসীদের ভোটাধিকার শুধু নয়, প্রবাসে বসেই যাতে তারা ভোট দিতে পারেন এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আগামী বছরের প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনিবার্য তবে কোনো অপরিপক্ক বা প্রহসনের যেনতেন নির্বাচন জনগণ আর মেনে নেবে না। গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা সারাদেশে পাহারা বসিয়েছি আমরা কোনো প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না।
গতকাল বুধবার সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌরসভা জামায়াত আায়োজিত জনশক্তি ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচন হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, পেশিশক্তি ও কালো টাকামুক্ত। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে এই নির্বাচনও হবে ব্যর্থ। সরকারি পর্যায়ে নৈতিকতার সংকট তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫৪ বছরে চারত্রিক সম্পদের অভাবে এ দেশ গঠন হয়নি। যারা ক্ষমতায় আসে, তারা জনগণের স্বার্থের বদলে নিজেদের স্বার্থকেই বড় করে দেখে। তারা দুদককে ভয় পেলেও আল্লাহকে ভয় করে না। যদি আল্লাহকে ভয় করত, তবে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেত। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবৈধভাবে দেশের অর্থ পাচারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, যে বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে, তা দেশে থাকলে আর কোনো অর্থনৈতিক সংকট থাকত না। দুর্নীতির নানা মাত্রা থাকলেও সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ হলো বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি বলে মন্তব্য করেন ডা. শফিকুর রহমান।
আমীরে জামায়াত বলেন, জামায়াতের নেতৃত্বে বাংলাদেশ হবে মানবিক, ইনসাফভিত্তিক ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র। ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই বিপ্লব কারও একক কৃতিত্ব নয়। এর কোনো নির্দিষ্ট মাস্টারমাইন্ড নেই। সবাই মিলে এ বিপ্লব ঘটিয়েছে, আর সবাই মিলে গড়বে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আমরা অতীতের মতো বস্তাপঁচা নির্বাচন চাই না, এমন নির্বাচন মেনেও নেব না এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচন হতে হবে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে, কালো টাকার প্রভাব ও মাস্তানতন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
বিয়ানীবাজার জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমীর মাওলানা ফয়জুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনশক্তি ও সুধী সমাবেশে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে রাখতে হবে নিরপেক্ষ। কালো টাকার খেলা ও মাস্তানতন্ত্র বরদাশত করা হবে না।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ২৬ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা যা দেশের বার্ষিক বাজেটের পাঁচ গুণ। এই অর্থ দেশে থাকলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতো। শুধু কথায় নয়, কাজে প্রমাণের আহ্বান জানিয়ে আমীরে জামায়াত বলেন, দুর্নীতিমুক্ত, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়াই তাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, বিদেশীরাও বলছে শুধু দুর্নীতি কমলেই বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। দুর্নীতি মানেই শুধু ঘুষ বা চাঁদা নয়, এর বাইরে রয়েছে বুদ্ধিনির্ভর দুর্নীতি, যা আরও ভয়াবহ। ক্ষমতায় থাকাকালে তারা নিজেদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে মনে করে, আর সংকট দেখা দিলেই দেশ ছেড়ে পালায়।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের কারও বিদেশে কোনো ‘বেগমপাড়া’ নেই। কিন্তু যারা বছরের পর বছর ক্ষমতায় ছিল, তাদের সম্পদের হিসাব নেই। তিনি আরও বলেন, ওবায়দুল কাদের একসময় বলেছিলেন, ক্ষমতা হারালে পাঁচ লাখ মানুষ হত্যা করা হবে। কিন্তু আমরা ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর সারাদেশে পাহারা বসিয়েছি। আমরা কোনো প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না।
ডা: শফিক বলেন, আমরা শুধু কথায় বিশ্বাস করি না, কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ দিই। জুলাই যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। মাসের প্রথম তারিখে তাদের নিয়মিত সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। নারায়ণগঞ্জের শহীদ সুমাইয়ার মেয়ে সুবাইতার দায়িত্ব আমরা নিয়েছি।
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, আমরা গড়তে চাই মানবিক, বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ। যেখানে থাকবে ন্যায়বিচার, থাকবে না অনিয়ম বা অন্যায়।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য, গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজার আসনে দলের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর ও সিলেট- ১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সিলেট-২ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যাপক আবদুল হান্নান, সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও সিলেট -৪ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর বিয়ানীবাজার পৌর আমীর মাওলানা মোস্তফা উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ মাওলানা নাজমুল ইসলাম, মুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ আল মামুন, একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, জেলা জামায়াতের কর্ম পরিষদের সদস্য নাজিম উদ্দীন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন রেহান, গোলাপগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যক্ষ জিন্নুর আহমদ চৌধুরী, বিয়ানীবাজার উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ রুকন উদ্দিন, উপজেলা জামায়াতের নেতা মুহাম্মদ আবদুল হামিদ,লাউতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, পূর্ব জেলা শিবিরের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান, জেলা শিবিরের অর্থ সম্পাদক আহবাব হোসেন মুরাদ।
বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর জামায়াত এই জনশক্তি ও সুধী সমাবেশের আয়োজন করে। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও এতে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশস্থলে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে অংশ নেন।