শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৪৯ মিনিটে সারা দেশের মতো গাজীপুরেও শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। কয়েক সেকেন্ডের ঝাঁকুনিতে আতঙ্কে ঘরবাড়ি, অফিস, কারখানা ছেড়ে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। শিল্পাঞ্চল হওয়ায় বেশিরভাগ শ্রমিক দৌড়ে নামতে গিয়ে আহত হওয়ায় জেলায় মোট আহতের সংখ্যা চার শতাধিক ছাড়িয়েছে।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মামুনুর রহমান জানান— জেলায় মোট ৪০০ জন আহত, ভর্তি ৮৬ জন,ছোটখাটো আঘাত নিয়ে ছাড়া ৯৭ জন, টঙ্গীতে চিকিৎসা পেয়েছেন ৯০ জন, গুরুতর ৪৩ জনকে রেফার করা হয়েছে। এছাড়া শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কাপাসিয়া ও গাজীপুর সদরের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন জানান— গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় হাসান তারভিন গার্মেন্টস-এ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন, শ্রীপুরের ডেনিম্যাক গার্মেন্টস-এ আরও ৬–৭ জন আহত হয়েছেন। মহানগরের ২৪ নং ওয়ার্ড চাকুলিয়া এলাকায় চারতলা ভবন হেলে পড়েছে।এছাড়া গাজীপুর প্রেসক্লাব ভবনেও ফাটল দেখা দিয়েছে।

শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান— হাসপাতালে মোট ৮২ জন আহত রোগ এসেছে, ভর্তি ৫৫ জন, যার মধ্যে ৪৯ জন নারী, ৫ জন পুরুষ, ১ শিশু। তাদের সবাই মূলত দৌড়াদৌড়ি ও আতঙ্কে পড়ে আহত হয়েছেন। হাসপাতালের পুরাতন ওয়ার্ড ভবনের একাংশে ফাটল দেখা গেছে।

সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষঃ

সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক সরফ উদ্দিন আহমেদ বলেন— নগরবাসীর সুরক্ষা ও সেবা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভূমিকম্পের পরপরই ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। নগর ভবন–২য় তলা, কক্ষ নং–২০১ টেলিফোন: ০২-২২২৪৪২৪০৭০ মোবাইল: ০১৭১২৮৩৬৮৭৩, ০১৯১৫৬৭৬৮৩২ ই-মেইল: [email protected] সিটি কর্পোরেশন সচিব মোঃ আমিন আল পারভেজ জানান, বিদ্যুৎ, পানি, স্যানিটেশন, ভবনে ফাটল—যেকোনো অভিযোগে আমরা এখনই রেসপন্স করছি।

জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষঃ গাজীপুরের এডিসি জেনারেল মুতাসেম বিল্লাহ জানান, ভূমিকম্প পরবর্তী তথ্য সংগ্রহ ও নাগরিক সেবা প্রদানে জেলা প্রশাসনও নিজের জরুরি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা কক্ষ নং – ১০৫, গাজীপুর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা: মোঃ আওলাদ হোসেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ও সানজিদা আক্তার উচ্চমান সহকারী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা যোগাযোগ: টেলিফোন: ০২-২২৪৪২৩১৭৬ মোবাইল: ০১৭০০৭১৬৬৭৯, ০১৬২০২৮৪১৬৪ ই-মেইল: [email protected] জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলম হোসেন বলেন— জরুরি সেবা নিশ্চিতের জন্য সব উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ একযোগে কাজ করছে। হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত জানানো হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোতাছেম বিল্যাহ বলেন— “নাগরিক সেবা, নিরাপত্তা, ক্ষয়ক্ষতি যাচাই—সব প্রক্রিয়া জরুরি গতিতে চলছে। যে কোনো তথ্যের জন্য আমাদের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করুন। পুলিশের প্রস্তুতিঃ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ ইসরাইল হাওলাদার জানান— নগরের প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আহতদের হাসপাতালে নেয়ার কাজও পুলিশ করছে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক বলেন, “জেলার জেলার কোথাও বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি । কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আতঙ্কিত হয়ে আহত হয়েছে। উপজেলার সব স্পটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জরুরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নগরজুড়ে ভবনে ফাটল, হেলে পড়া কাঠামো পরীক্ষায় প্রকৌশলীরা কাজ শুরু করেছেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস নাগরিকদের সতর্ক থাকতে এবং যেকোনো সমস্যা দেখলেই জরুরি নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছে।

ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি জানতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছুটে যান গাজীপুর-৬ আসনের জামাত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডঃ হাফিজুর রহমান। তিনি আহতদের চিকিৎসা সেবা, চিকিৎসকদের প্রস্তুতি এবং হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করেন।

ডঃ হাফিজুর রহমান বলেন— যে কোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের প্রথম দায়িত্ব। ভয় নয়, আমরা সবাই মিলে সহযোগিতা ও সচেতনতার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সামাল দেব। আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতে আমি সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করছি। আল্লাহ চাইলে সবাই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।

তার এই উপস্থিতি ও আশ্বস্তকর বক্তব্য স্থানীয় মানুষ এবং রোগীর স্বজনদের মাঝে ইতিবাচক বার্তা তৈরি করে।