যশোর শহরের উপশহর পার্ক সংলগ্ন এলাকায় পার্কিং করে রাখা একটি যাত্রীবাহী বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ভোরে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের দ্রুত পদক্ষেপে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফজরের নামাজের কিছুক্ষণ পর এলাকাবাসী হঠাৎ বাস থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখেন। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা বাসের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কাছাকাছি বস্তির লোকজন ছুটে এসে প্রায় ২০ মিনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তাঁদের দ্রুত পদক্ষেপে পাশের বস্তির শতাধিক ঘর অল্পের জন্য রক্ষা পায়।
স্থানীয় বাসিন্দা তারেক বলেন, হঠাৎ আগুন দেখে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। যদি আমরা সঙ্গে সঙ্গে পানি ঢালা শুরু না করতাম, তাহলে পুরো বস্তিটাই পুড়ে যেত।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাসটির নাম ‘রাহিন স্পেশাল’। এটি নিয়মিতভাবে যশোর-মাগুরা রুটে চলাচল করে। বাসের সুপারভাইজার হান্নান খান জানান, প্রতিদিনের মতো বুধবার রাতেও বাসটি উপশহর এলাকায় পার্কিং করে রাখা হয়েছিল। আমি সেদিন রাতে বাসেই ঘুমিয়েছি। ভোরে বাসায় ফেরার কিছুক্ষণ পরেই খবর পাই, বাসে আগুন লেগেছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্বৃত্তরা সম্ভবত জানালা ভেঙে ভেতরে আগুন দিয়েছে। এতে বাসের সিট, জানালা ও অভ্যন্তরীণ অংশ পুড়ে গেছে, তবে ইঞ্জিন অক্ষত আছে।
যশোর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কাজী বাবুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কেউ বাইরে থেকে জানালা ভেঙে ভেতরে আগুন দিয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ করেছি। দুর্বৃত্তদের শনাক্তে তদন্ত শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, ঘটনাস্থলে থাকা নাইটগার্ড আগুন লাগার সময় পাশের দোকানে চা খেতে গিয়েছিলেন। ওই সময়টিতে বাসে কেউ ছিল না।
পুলিশের একটি টিম আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে এবং এলাকার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এলাকার বস্তিবাসীরা বলছেন, পার্কিং করা বাসের পাশে ঘরবাড়ি থাকায় অল্পের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় এড়ানো গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা বলেন, যদি আগুন একটু ছড়িয়ে পড়তো, তাহলে আমাদের পুরো বস্তি শেষ হয়ে যেত। আমরা নিজেরাই পানি ঢেলে আগুন নিভিয়েছি, ফায়ার সার্ভিস আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পার্কিং এলাকাটিতে রাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই এবং নিয়মিত নাইটগার্ড থাকলেও তদারকি দুর্বল। তাঁরা দ্রুত নিরাপত্তা জোরদার ও সিসিটিভি নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হাতে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের মতো কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এমন ঘটনায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হচ্ছে এবং জননিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এসব ঘটনার পেছনে যারা জড়িত, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
দুর্বৃত্তদের এই আগুনে বড় ধরনের প্রাণহানি না হলেও সম্পদের ক্ষতি এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি উভয়ই সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পার্কিং এলাকাগুলোতে যথাযথ নজরদারি ও পুলিশের নিয়মিত টহল নিশ্চিত করা জরুরি।
যশোর পুলিশের একটি বিশেষ টিম বর্তমানে ঘটনাটি তদন্ত করছে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার বা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।