নোয়াখালী সংবাদদাতা : গতকাল রোববার, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের শহীদ মো. হাসানের জানাযা শেষে সুবর্নচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়ন এর চেউয়াখালি বাজারসংলগ্ন এলাকায় শহীদ হাসানের মায়ের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এসময় জানাযায় বক্তব্য প্রদান করে শোক প্রকাশ করেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও নোয়াখালী জেলা জামায়াতে আমীর ইসহাক খন্দকার। উল্লেখ্য হাসান পনের বছর আগে পিতা হারায়, রামগতি থেকে সুবর্ণচরে নানার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা মায়ের বুক খালি করে দেয়। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. হাসান মারা যান। গতকাল রোববার হাসানের নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। হাসান তার পরিবারের একমাত্র ছেলে। মা, সহ দুই বোন তাকে হারানোর শোকে বিভোর। বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন জাতিকে নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে। স্বৈরাচার পতনে শহীদ হাসানের আত্মত্যাগ ও অবদান জাতি চিরকাল স্মরণ করবে। আমরা তার রূহের মাগফেরাত কামনা করি। তাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। শহীদের মায়ের সাথে সাক্ষাৎ করে তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দেন।
শোক প্রকাশ করে ইসহাক খন্দকার বলেন, জুলাই আন্দোলনে শহীদ মো. হাসানদের আত্মত্যাগের ফলে আমরা পুনরায় স্বৈরাচারমুক্ত একটি স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার পেয়েছি। তাদের এই অবদান ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। হাসানের রক্তস্নাত বাংলাদেশে আর কখনো ফ্যাসিবাদ উত্থান না ঘটতে পারে আমরা সেই শপথ গ্রহণ করছি। আমরা মহান আল্লাহর কাছে তার রূহের মাগফেরাত কামনা করি। একমাত্র ছেলে হারিয়ে অসহায় পরিবারকে আল্লাহ শোক সইবার তৌফিক দান করুন এই দোয়া করি। জানাযা শেষে তিনি শহীদ হাসানের মা ও পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করেন। যেকোনো সমস্যায় নোয়াখালী জেলা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে শহীদ হাসানের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
শহীদ হাসানের বোন সুইটি আক্তার বলেন, ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য যথাযথ সুযোগ করে দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি জানান, সরকারের কাছে কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই তাদের। তার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার দ্রুত কার্যকর করার অনুরোধ জানান তিনি।
শহীদের চাচা মো. সাদ্দাম হোসেন মিনতি করে বলেন, হাসানের বাবা নেই। সে তার পরিবারের একমাত্র সম্বল ছিলো। এমতাবস্থায় তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই। বিয়ের উপযুক্ত তার একটি বোন অবশিষ্ট আছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রামের টাইগারপাসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হাসানকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বামরুনগ্রাদ হাসপাতাল পাঠানো হয়। শেষে তাকে সে দেশের পায়াথাই পাহোলিওথিন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে হাসানের মৃত্যু হয়। জানাযায় আরো উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রনেতা মহিউদ্দিন রনি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নোয়াখালীর আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম সব বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ। দাফন শেষে দোয়া ও মুনাজাত করেন নোয়াখালী সুবর্ণচর উপজেলা জামায়াতে আমীর মো. জামাল উদ্দিন।