লোকসান দিয়ে পশুর চামড়া বিক্রি করছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। এবার সিন্ডিকেট থাকবে না আর বাজারও ভালো থাকবে- এই আশা করে সরকারঘোষিত দরে চামড়া কিনেছিলেন তারা। কিন্তু বিধি বাম, সে আশা পূরণ হয়নি তাদের।
রাজশাহী মহানগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার একজন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী গত ঈদে সারাদিন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ৭৬টি গরুর চামড়া কেনেন। প্রতিটি চামড়া তিনি কেনেন ৬০০-৮০০ টাকা দামে। সেই চামড়া ওইদিন সন্ধ্যায় অটোরিকশা ভাড়া করে বিক্রি করতে নিয়ে যান জেলার পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুরে। কিন্তু নিয়ে গিয়ে দেখেন চামড়া কেনার তেমন কোনো লোক নেই। অগত্যা রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রতিটি চামড়া গড়ে সাড়ে তিনশ’ টাকা দামে বিক্রি করে বাড়িতে চলে আসেন। তিনি বলেন, “আমিসহ আরো এক বন্ধু মিলে ওই চামড়াগুলো কিনেছি। একটা অটোরিকশার ভাড়া দিয়েছি সারা দিনের জন্য দুই হাজার টাকা। এছাড়াও পকেট খরচ গেছে আরও প্রায় ৫০০ টাকা। সবমিলিয়ে চামড়া কিনতে ৫০ হাজার টাকায় ব্যয় হয়েছে। কিন্তু সেই চামড়া বিক্রি করেছি ২৬ হাজার ৬০০ টাকায়। সবমিলিয়ে চামড়া কিনতে গিয়ে ২৩ হাজার ৪০০ টাকায় লোকসান হয়েছে। পকেট খরচ বাদ দিলেও ২৩ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে আমাদের।”
অপরজন বলেন, “চামড়ার সিন্ডিকেট এবার থাকবে না। দামও ভালো পাওয়া যাবে-গণমাধ্যমে এমন খবর দেখে আমরা চামড়া কিনতে গেছিলাম। ঈদের দিন ঈদ আনন্দ মাটি করে দুটাকা লাভের মুখ দেখার আশায় বের হয়ে লাভ তো দূরের কথা দুই বন্ধু প্রায় কাঁদতে কাঁদতে রাতে বাড়ি এসেছি।” রাজশাহীর দুর্গাপুরের আমগাছী গ্রামের পেশায় একজন কসাই প্রতিবার ঈদে ধার-দেনা করে গরু-ছাগলের চামড়া কিনেন। এবার ঈদের দিনেও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়েছিলেন চামড়া কিনতে। এলাকায় ঘুরে ঘুরে তাঁরা বাপ-ছেলে মিলে প্রায় ৩০ হাজার টাকার চামড়া কিনেছিলেন। একেকটি চামড়া ৫০০-৭০০ টাকা দরে তাঁরা কুরবানিদাতাদের নিকট থেকে কিনে নিয়েছিলেন। সেই চামড়া ওইদিন রাতে তারা বিক্রি করতে নিয়ে যান দুর্গাপুর উপজেলা সদরে। কিন্তু ৩০ হাজার টাকা চামড়া কিনে তারা বিক্রি করে পান ২২ হাজার টাকা। এতে করে ৯ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয় আবেদ আলীকে। তিনি বলেন, “আমরা দক্ষ মানুষ হয়েই চামড়া কিনতে গিয়ে ধরা খেয়েছি। তাহলে যারা চামড়া সম্পর্কে জানেন, এমন মৌসুমি ব্যবসায়ী কি পরিমাণ লোকসান করেছেন ভাবেন?” আরেকজন ব্যবসায়ী এবার ঈদের দিনে চামড়া কিনে প্রায় ৭০ হাজার লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে দাবি করেন।
এদিকে, জেলার পবা উপজেলার নওহাটা এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, ‘যেসব চামড়া একটু কেটে গেছে, সেসব চামড়া কেনার কোনো লোক পাওয়া যায়নি। তাই অনেকেই চামড়া বারনই নদীতে ফেলে দিয়েছে। আবার খাসি ও গরু মহিষের মাথার চামড়া তো বিক্রি হয়নি বললেই চলে। বিক্রি হলেও ১০-২০ টাকা দাম। তাই কেউ কেউ বিক্রি না করে নদীতে ফেলে দিছেন।’ রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির একজন কর্মকর্তা জানান, “চামড়ার বাজার এখন পর্যন্ত খুব খারাপ। সামনে ১০-১২ দিন পরে কি হবে বলা যাচ্ছে না। আমরা কাটা চামড়া কিনিনি। একটা চামড়ার পেছনে অন্তত ৩০ টাকা খরচ হয়। আর কাটা চামড়া বিক্রি করে দাম পাওয়া যাবে হয়তো ৪০-৫০ টাকা বা তারও কম। তিনি জানান, কুরবানির সময় সাধারণত অদক্ষ লোকজনই বেশি পশু জবাইয়ের পর শরীর থেকে চামড়া ছিলা বা আলাদা করার কাজ করেন। এতে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চামড়া কেটে যায়। সে কারণে খুব সতর্কতার সঙ্গে চামড়া কিনতে হয়। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী কাটা চামড়ার দিকে তেমন গুরুত্ব দেন না। আবার গুরুত্ব দিলেও হয়তো অর্ধেক বা কিছু কম দামে কিনে ফেলেন। কিন্তু বাজারে তারা পরে বিক্রি করতে গিয়ে সেই হারে কাটা চামড়ার দাম পান না। এতে করে অধিকাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ী বেশি লোকসানের মুখে পড়েন। রাজশাহীর একজন ব্যবসায়ী জানান, এবার তিনি ঈদের দিনে ৩০০ পিসের মতো চামড়া কিনেছেন। প্রতিটি চামড়া ৩০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছেন। সেগুলো দোকানেই লবণ দিয়ে মওজুদ করে রেখেছেন। ১০-১২ দিন পরে নাটোরে নিয়ে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে আসবেন তিনি।