রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যকে সামনে রেখে মোংলা সমুদ্র বন্দর বর্তমানে বহুমুখী উন্নয়ন কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় পার করছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতেই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে এ বন্দর। একই সঙ্গে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গ্রহণ করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ। চলতি অর্থবছরে প্রায় ৯০০টি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনের মাধ্যমে নতুন রেকর্ড গড়ার প্রত্যাশা করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার মোংলা বন্দর নিয়ে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সমুদ্র বন্দরটিকে আরও লাভজনক করে তুলতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় মোংলা বন্দরের কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে একে আঞ্চলিক ও আধুনিক বাণিজ্যের হাব হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে চীন এ প্রকল্পে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম শক্তি চীনের সহায়তায় মোংলা বন্দরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, বর্তমানে বন্দরের মোট সক্ষমতার মাত্র ৬০ শতাংশ ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে শতভাগ সক্ষমতা কাজে লাগাতে ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, শিগগিরই এর সুফল পাওয়া যাবে। তার মতে, বন্দরের পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারলে বছরে প্রায় ১,৫০০ বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন, এক লাখ টিইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং, দুই কোটি মেট্রিকটন কার্গো হ্যান্ডলিং এবং প্রায় ২০ হাজার রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি সম্ভব হবে। এসব কার্যক্রম থেকে বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা যাবে, পাশাপাশি এ অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. মাকরুজ্জামান মুন্সী দৈনিক সংগ্রামকে জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩৯ দিনেই বন্দরে ৮৫টি জাহাজ নোঙর করেছে। শুধু জুলাই মাসেই বন্দরের মাধ্যমে ৫১৮টি গাড়ি আমদানি, ৪ হাজার ৪৫৯ টিইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এবং প্রায় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিকটন কার্গো হ্যান্ডলিং সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, বছরের শুরুটা অত্যন্ত ইতিবাচক হওয়ায় এ বছর ৯০০ জাহাজ আগমনের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে তারা আশাবাদী।

সূত্র আরও জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দর প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অতিরিক্ত ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিট মুনাফা করেছে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, সেখানে অর্জিত আয় হয়েছে ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ নিট মুনাফা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। একই সঙ্গে বন্দরের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে প্রায় ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

এভাবে ধারাবাহিক সাফল্যের মাধ্যমে মোংলা বন্দর শুধু জাতীয় অর্থনীতির রাজস্ব প্রবাহ বাড়াচ্ছে না, বরং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কর্মসংস্থান ও শিল্প-বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।