রাজশাহীতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির চাপে যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। ফলে কম দামে ওএমএস’র পণ্য কিনতে মধ্যরাত থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন অনেকেই। এরকম দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়।

বাজারে নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যের মধ্যে সরকারি খোলাবাজারে (ওএমএস) অর্ধেক দামে চাল-আটা কিনতে মরিয়া হয়ে উঠেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। রাজশাহীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিদিন সকালে ট্রাক এলেও অনেকে মধ্যরাত কিংবা ভোররাত থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। নগরীর চৌদ্দপাই এলাকায় দেখা যায় এমন একটি দৃশ্য। তবে এমনও দেখা যায় যে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। সূত্র মতে, রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে সাপ্তাহিক ছুটি বাদে পাঁচ দিন ওএমএস চাল-আটা বিক্রি করা হয়। প্রতি ট্রাকে এক টন চাল ও এক টন আটা বরাদ্দ থাকে।

একজন সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল (প্রতি কেজি ৩০ টাকা) এবং ৫ কেজি আটা (প্রতি কেজি ২৪ টাকা) কিনতে পারেন। কিন্তু বিপুল ভিড়ের কারণে সবাইকে দেয়া সম্ভব হয় না। নগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা রোজেনা বেগম জানান, তিনি রাত ৩টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চাল-আটা কেনার সুযোগ পান। তিনি বলেন, “একজনের আয়ে চার-পাঁচজনের সংসার চলে না। না আসলে তো খাবার জুটবে না। তাই বাধ্য হয়েই রাত থেকে আসি।” লাইনে দাঁড়ানোদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রবীণ নারী ও বয়স্ক মানুষ। হাতে টুল, পিঁড়ি বা ইট-পাথর নিয়ে তাঁরা রাত কাটান ট্রাকের অপেক্ষায়। পুরুষদের চেয়ে বয়স্ক নারীদের উপস্থিতি বেশি চোখে পড়ে। ভোর ৫টার দিকে মো. ইসলাম লাইনে দাঁড়ান। তিনি বলেন, “ভোরে না এলে চাল-আটা মেলে না। না পেলে খালি হাতেই চলে যেতে হয়। অনেকে মধ্যরাতে এসেই ঘুমায়। আমরা ভোর থেকে আছি লাইনে, ভাগ্যে থাকলে পাবো, না হলে আবার আসবো।’ একজন ডিলার জানান, “রাত ১২টা বা ১টার দিকেই অনেকে এসে পড়েন। নিষেধ করলেও শোনেন না। এখানে প্রয়োজনের দ্বিগুণ মানুষ আসে। তাই আমরা বরাদ্দ বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছি।” একজন খাদ্য পরিদর্শক জানান, “লোকসমাগম অনেক বেশি হওয়ায় সবাইকে দেয়া সম্ভব হয় না। সর্বোচ্চ ২০০ জনকে দেয়া যায়। তবে এই এলাকায় বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।”

হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি ও বিশিষ্ট গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী এবিষয়ে বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির পাশাপাশি কর্মসংস্থান না থাকা এবং কাজের সুযোগ কমে যাওয়ার কারণে অতি সাধারণ মানুষ কম মূল্যের পণ্য কেনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছেন। সরকার হয়তো কম দামে পণ্য দিচ্ছে বলে প্রশংসা পাচ্ছে। কিন্তু এই গভীর রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে, এটি হতাশারও একটা দিক। এজন্য যে কর্মঘন্টা অপচয় হচ্ছে এবং মানুষ আত্মগ্লানিতে ভুগছেÑ এটিও ভাবতে হবে।

তিনি দ্রব্যমূল্য কমানো এবং মানুষের কাজের সংস্থান বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেন।