নুরুল আমিন মিন্টু, চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা পরিণত হয়েছে আতঙ্কের জনপদে। একের পর এক সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে অস্থির হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত গত ১৪ মাসে এখানে সংঘটিত হয়েছে অন্তত ১৭টি হত্যাকাণ্ড। এর মধ্যে ১২ টি হত্যা ঘটেছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে। বাকি ঘটনাগুলো পারিবারিক বিরোধ, চাঁদাবাজি ও দখল সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সংঘটিত হয়েছে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এসব হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে সংঘটিত হলেও অধিকাংশ ঘটনায় জড়িতদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এসব ঘটনার পেছনে জড়িত রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। কেউ পাড়া-মহল্লায়, আবার কেউ পুরো ইউনিয়নজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা এলাকায় চরম ত্রাসের সৃষ্টি করেছে, আর তাদের কাছে যেন জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ—এই বাহিনীগুলোর অধিকাংশেরই সরাসরি দলীয় পদ-পদবি না থাকলেও, তারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রভাব ব্যবহার করে নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে রাউজানে আবারও প্রকাশ্যে গুলিতে নিহত হয়েছেন এক ব্যক্তি। উপজেলার পৌরসভার রশিদারপাড়া সড়কে দুর্বৃত্তরা তার গতিরোধ করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। নিহতের নাম মো. আলমগীর ওরফে আলম (৫০)। তিনি রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ব রাউজানের সিদ্দিক চৌধুরী বাড়ির মো. আবদুস সত্তারের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত আলমগীর ওরফে আলম বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের কর্মী ছিলেন বলে এলাকায় প্রচলিত রয়েছে। তবে এ দাবি অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি সাবের সুলতান কাজল। তিনি বলেন, ‘নিহত আলমগীর ওরফে আলম যুবদলের কেউ নন। তিনি এলাকায় ‘আলম ডাকাত’ নামে পরিচিত ছিলেন। তবে এ হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘আলমগীর ওরফে আলম নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ রশিদারপাড়া সড়কের পাশে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করা হয়েছে। কে বা কারা তাকে গুলি করে পালিয়ে গেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। লাশ থানায় এনে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
এর আগে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে করে আসা অস্ত্রধারীদের ছোড়া গুলিতে মুহাম্মদ আবদুল হাকিম (৫২) নামের বিএনপির এক কর্মী নিহত হন। এ সময় তার সঙ্গে গাড়িতে থাকা আরেকজন গুলিবিদ্ধ হন। উপজেলার দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নের মদুনাঘাট বাজারের পানি শোধনাগার মূল ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনি প্রাইভেটকারে চড়ে রাউজান থেকে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন হাকিম।
বিএনপির দুই গ্রুপ : ১৪ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ২৪৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসবাস। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বিভাজন, আধিপত্য বিস্তার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অস্থির হয়ে উঠেছে পুরো উপজেলা।
এখানে বিএনপির রাজনীতি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, অপর পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অন্যান্য স্থানে দলীয় আশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও রাউজানে চিত্রটি হয়েছে উল্টো। এখানে ওইসব সন্ত্রাসী দলীয় রং বদলে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার অনুসারী হয়ে এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টি করছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিএনপির শাসনামলে বিদেশে পালিয়ে থাকা নেতাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরাও।
বর্তমানে উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয়। এদের অনেকেই বিএনপির নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এসব গ্রুপ বালুমহাল দখল, পাহাড় থেকে মাটি বিক্রি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ইটভাটা থেকে চাঁদাবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ এবং সড়কে চাঁদা আদায়সহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাদের এই দৌরাত্ম্যে রাউজানজুড়ে প্রতিদিনই ঘটছে সংঘর্ষ ও সহিংসতা, আর সাধারণ মানুষ পরিণত হচ্ছে আতঙ্কগ্রস্ত বন্দী নাগরিকে।
১২ হত্যা, ৬৫ সংঘর্ষে উত্তপ্ত রাউজান : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় সংঘটিত হয়েছে অন্তত ৬৫টি সংঘর্ষের ঘটনা। একই সময়ে ১৭টি হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে ১২টি হত্যাকাণ্ড সরাসরি রাজনৈতিক বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটেছে।
তথ্য অনুযায়ী, এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে আটটির ঘটনায় নিহতদের পরিবার মামলা দায়ের করেছে, আর তিনটি ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। বাকি ঘটনাগুলোর তদন্ত এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিহতদের মধ্যে বিএনপি ও যুবদলের ৭ জন কর্মী রয়েছেন— মো. আলমগীর ওরফে আলম, মুহাম্মদ আবদুল হাকিম, সেলিম, কমর উদ্দিন, ইব্রাহিম, দিদারুল ও মানিক আবদুল্লাহ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের চার নেতা-কর্মী— আবদুল মান্নান, মুহাম্মদ ইউসুফ মিয়া, আবু তাহের ও মুহাম্মদ হাসান রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়, যা এলাকাজুড়ে তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, চাঁদাবাজি, বালুমহাল দখল ও এলাকা নিয়ন্ত্রণের দ্বন্দ্ব থেকেই এসব সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের দৃশ্যমান কঠোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
নোয়াপাড়ায় সবচেয়ে বেশি হত্যা, সক্রিয় একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী : পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে নোয়াপাড়া ইউনিয়নে। এ এলাকায় সক্রিয় রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য— ফজল হক বাহিনী, জসিম বাহিনী, কামাল বাহিনী ও জানে আলম বাহিনী। পাশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নে সক্রিয় রমজান বাহিনী, আর বাগোয়ান এলাকায় রয়েছে মামুন বাহিনী ও ভূপেশ বাহিনী।
এ ছাড়াও রাউজান পৌরসভা এবং উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই কোনো না কোনো সশস্ত্র বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের মদদেই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব বাহিনীর বেশিরভাগ গড়ে উঠেছে। এসব বাহিনীর তৎপরতায় সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখন রাউজানে সংঘর্ষ, গোলাগুলি, হামলা ও খুন যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রায়ই প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। চাঁদাবাজি চলছে খোলাখুলিভাবে। স্থানীয়দের ভাষায়, “দেখে মনে হয়— এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। আমরা প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে আছি।”
নোয়াপাড়া পথেরহাট বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নোয়াপাড়া পথেরহাট বাজার এখন ছোটখাটো এক শহরের মতো। এখানে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের যত শাখা রয়েছে, অনেক জেলা শহরেও এতগুলো নেই। আগে বাজার মধ্যরাত পর্যন্ত জমজমাট থাকত, এখন সন্ধ্যা নামলেই মারামারি ও গোলাগুলি শুরু হয়। তাই সন্ধ্যা নামতেই দোকানপাট বন্ধ করে দিতে হয়। কখনও বাহিনীর লোকজন দোকানে এসে ভয়ভীতি দেখায়, আবার কখনও অনুষ্ঠান বা কর্মসূচির নামে জোর করে চাঁদা নেয়।’
নিস্তার চান বিএনপি নেতারা : চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ তালুকদার বলেন, ‘কথায় কথায় রাউজানে গুলি করে মানুষ হত্যা হচ্ছে। আমরা আওয়ামী লীগের সময়ে ১৭ বছর নির্যাতিত ছিলাম, এলাকায় ঢুকতে পারিনি। তখন অসংখ্য মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছি। ৫ আগস্টের পর গ্রামে ফিরে এসেছি, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতেও আমরা হতাশ। আগের মতোই সহিংসতা চলছে। আমরা এই অবস্থার থেকে নিস্তার চাই।’
রাউজানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার। তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর রাউজানে যে কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফল নয়। বরং এর পেছনে মূল কারণ হলো মাটি কাটা, খালের বৈধ ও অবৈধ বালুর মহাল দখল ও বিক্রির বিরোধ, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি ও কমিশন বাণিজ্য, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় এবং অন্যান্য অনিয়ম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি চাঁদাবাজির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “রাঙামাটি-কাপ্তাই থেকে প্রতিদিন গাছের ট্রাক আসে। প্রতিদিন প্রায় ৫০টির বেশি গাড়ি থেকে চাঁদা তোলা হয়। রাউজানে ৩৮টির মতো ইটভাটা রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটা থেকে ৩ লাখ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বাড়ি নির্মাণের সময় ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ওই টাকা তুলতে ‘কালেক্টর’ রয়েছেন, যারা টাকা সংগ্রহ করে অ্যাকাউন্টে জমা দেন। এভাবে প্রতিদিন কোটি টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে।”
তিনি এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, অনিয়ম ও চাঁদাবাজি রোধ না হলে রাউজানে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে। রাউজানের পরিস্থিতি জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, “আমি রাউজানকে শান্তির জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমার কাছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের কোনো স্থান নেই। আমি প্রশাসনকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, যারা রাউজানে বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করলেই সবকিছু শান্ত হবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের কারণে রাউজানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত ১৪ মাসে অনেকটাই অবনতির মুখে পড়েছে। এর প্রেক্ষিতে রাউজান থানার তিনবার বদলি করা হয়েছে। তবুও পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাউজানে মোট ১৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ১১ জন নিহত রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায়। এসব হত্যাকাণ্ড আটটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে, তবে সকলেই গ্রেফতার হয়নি।
ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যা: এ পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। কমর উদ্দিন হত্যা মামলা: ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আর আরও ৮ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। মুহাম্মদ হাসান হত্যা মামলা: ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ মানিক হত্যা মামলা: ১৭ জনকে আসামি করে মামলা, ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ইব্রাহিম হত্যা: ৮ জনকে আসামি করে মামলা, সকলকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আরও একজন আত্মসমর্পণ করেছেন।
সেলিম হত্যা মামলা: ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে, একজন এজাহারভুক্তসহ ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর বাইরে তিনটি রাজনৈতিক হত্যার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে, কিন্তু এগুলোতে এখনও কোনো গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ জানাচ্ছে, পারিবারিক বিরোধ, চাঁদাবাজি ও দখলকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ৫টি হত্যার ক্ষেত্রে স্বজনরা মামলা দায়ের করেননি। ফলে মোট ১৭ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সব ক্ষেত্রে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
রাউজানে সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি : রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ জানিয়েছেন, ‘রাউজানে সক্রিয় সন্ত্রাসীদের অবস্থান এবং অপরাধপ্রবণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে একটি গুগল ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এই ম্যাপ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, সরকারের দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। বর্তমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য মূল দায়ী এই সন্ত্রাসীরা।’