তমিজউদ্দিন আহমদ : নারায়ণগঞ্জের বন্দরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৯ ও ২০ নং ওয়ার্ড সহ বেশ কিছু আবাসিক এলাকায় গ্রাহকরা তিতাস গ্যাস না পেয়ে বিগত ৫ বছর যাবত বিল পরিশোধ করে আসছে। বিভিন্ন কতৃপক্ষের কাছে ধর্না দিয়ে রোজার মাসে রাত থেকে ভোর পয়ন্ত গ্যাস পেলেও গত এক মাস যাবত গ্যাস একেবারেই নেই। দুর্ভোগ নিয়ে বৈষম্যের শিকার গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। গ্যাস সরবরাহের দাবীতে মানববন্ধন সহ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোন ফল পাচ্ছে না।

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে গ্যাস সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। কোন কোন এলাকায় রাতে ও বন্ধের দিনে পাওয়া যায়। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৯ ওয়ার্ডে মদনগঞ্জ, লহ্মারচর, ইসলামপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় ও ২০ নং ওয়ার্ডে সোনাকান্দা, দড়িসোনাকান্দা, মাহমুদনগর, বেপারীপাড়াসহ আশপাশের আবাসিক এলাকায় গ্রাহকরা গত প্রায় ৫ বৎসর যাবৎ তিতাস গ্যাস পাচ্ছে না। অথচ বিল পরিশোধ করে যাচ্ছে।

বৈষম্যের শিকার গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে গ্যাস সরবরাহের দাবীতে মানববন্ধন সহ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোন ফল পাচ্ছে না। আবেদনে বলা হয় এলাকায় গ্রাহক সংখ্যা ৫০ হাজার এবং দুই লাখ লোক বসবাস। প্রায় ৪ বছর আগেও লাইনে ৫০ পিএসআই গ্যাস এর চাপ দেওয়া ছিল। যা বর্তমানে গ্যাসের চাপ আছে ৫-৭ পিএসআই। এর মধ্যে ওই লাইন থেকে লক্ষণখোলায় আকিজের ময়দা ফ্যাক্টরী, কাঁচের ফ্যাক্টরী সহ মোট ৫ টি বৈধ শিল্প ও বাণিজ্যিক লাইনের সংযোগ দেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি ও নৌ-বাহিনী ডকইয়ার্ডসহ সোনাকান্দা এলাকায় আরও ৫ টি বিস্কুটের ফ্যাক্টরীতে বৈধ শিল্প ও বাণিজ্যিক লাইনের সংযোগ দেয়া হয়েছে। এতে আবাসিক এলাকায় গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছে না। এ অবস্থায় তিতাসের একটি টিম মার্চের প্রথম দিকে ২০ নং ওয়ার্ডে দড়িসোনাকান্দা এলাকায় পাইপের চেম্বার খুলে পাইপ কাঁটলে সেচের মত পানি বের হয়। সমস্যা সমাদানের নামে কর্তৃপক্ষ সড়কের মাঝে চেম্বারের ঢাকনা খুলে রেখে মৃত্যু ফাঁদে পরিনত করে বলে এলাকারবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঢাকনা বন্ধ করে দেয়।

এমন বিভিন্ন কতৃপক্ষের কাছে ধর্না দেয়ার পর রোজার মাসে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যেত। এমন দুর্ভোগ নিয়ে বৈষম্যের শিকার গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। কয়েক বছর আগে দিনে না থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যেত। এখন আবার সে অবস্থায় ফিরে এসেছে বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। ফলে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে কেরোসিন তেল বা লাকড়ি দিয়ে রান্না করতে হয় বলে জানান বলে গ্রাহকদের অভিযোগে প্রকাশ।

বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ফরাজীকান্দা থেকে মহনপুর পর্যন্ত আবাসিক এলাকায় গ্যাস না পেয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছেন। গ্রাহক সংকট নিরসনে গ্যাসের চাপ বৃদ্ধিও জন্য গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আবেদন করলেও কোন ফল হয়নি।

প্রায় ৫ বছর যাবত গ্যাস পায় না জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেন শাহ আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, মানুষ কষ্ট করছে জ¦ালানি কিনে ব্যবহার করছে আর সরকার গ্যাস বিল ঠিকই নিচ্ছে। বিগত সরকারের কাছেও বার বার আবেদন করেও কোন ফল হয়নি। রোজায় রাত থেকে ভোর পর্যন্ত গ্যাস পেলেও গত এক মাস যাবত গ্যাস একেবারেই নেই।

গ্যাস সরবরাহে বন্দরের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ সোনারগাঁয়ের উপমহাব্যবস্থাপকের কাছে গিয়েও তাকে পাচ্ছে না। কোন এক সময় পেলেও তিনি দেখবেন বলেই দায়িত্ব শেষ করছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।

জোনাল বিক্রয় অফিস-বন্দর এর ব্যবস্থাপক প্রকৌ. মো. জাহিন আমীর খান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৯, ২০ ও ২১ নং ওয়ার্ডে গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, সমাধানের কাজ চলমান আছে। আর সম্প্রতি সময়ে যে সমস্যা হয়েছে গ্যাস সরবরাহের পাইপে যে পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যায় সেটা চিহৃত করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে তারা বিষয়টি দেখবে বলে তিনি জানান।