# গার্ডার এবং পাইলিং এর গাইড ওয়াল ভেঙে ৩শ’ ফিট নদীতে

# ঘাটকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস

খুলনার নদী বন্দর নামে পরিচিত ৫নং ঘাট ভৈরব নদের গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় ষাটের দশকে নির্মিত ৫নং ঘাটের গার্ডার এবং গাইডওয়াল সংস্কারের অভাবে ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঘাটের প্রায় ৩শ’ ফিটগার্ডার এবং গাইডওয়াল ধসে নদীতে চলে গেছে।

স্থানীয় এবং ঘাটের শ্রমিকদের সূত্র জানা গেছে, খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার কাঁচামাল, সিমেন্ট, সারসহ বিভিন্ন মালামাল লোড-আনলোডের জন্য ১৯৬০ সালে খুলনার ভৈরব নদীর ৪ ও ৫নং ঘাট নির্মিত হয়। এক সময় ছিল প্রতিদিন ঘাটে ২৫ থেকে ৩০ টিজাহাজ থেকে মালামাল লোড আনলোড করা হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় এই ঘাটটি সংস্কারের অভাবে নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে। ভৈরব নদীর ৫নং ঘাটটি ২২৬০ ফিট লম্বায় শীট পাইলিং করে কংক্রিট দিয়ে গাইড ওয়াল করে গার্ডার তৈরি করা হয়। সংস্কারের অভাবে প্রায় ৪শ’ ফিট পাইলিং শীট মরিচা পড়ে গার্ডার ধসে নদীগর্ভে চলে গেছে। এছাড়াও অধিকাংশ শীট লবণাক্ত পানিতে মরিচা পড়ে গোড়া থেকে ক্ষয় হয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। গার্ডার ভেঙ্গে পড়ায় পার্শ্ববর্তী পাকা সড়ক ও নদীতে ধসে পড়েছে এবং অইেশ স্থানে বড়বড় ফাটল ধরেছে।

খুলনার ৫নং ঘাট এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা য়ায়, ঘাটের অবস্থা খুবই নাজুক, ঘাটের বেশবড় একটা অংশের গার্ডার ধ্বসে নদীর গর্ভে চলে গেছে। গার্ডার নির্মাণের লোহারসীট গুলোর অধিকাংশ মরিচা পড়ে গোড়ার দিকে নষ্ট হয়ে গেছে। বড় একটি অংশের লোহার শীট ভেঙে কংক্রিটের ঢালাই নদী গভের্ চলে গেছে এছড়াও কংক্রিটের ওয়ালে এবং রাস্তায় বড়বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।

৫নং ঘাট খাদ্য গুদাম হ্যান্ডলিং ওয়ার্কার্স শ্রমিক ইউনিয়নের (১৩৮) সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, খুলনার বন্দর ঘাট বলতে ৪ ও ৫ নং ঘাট কেই সবাই মনে করে। এই ঘাট দিয়ে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। অথচ বিআইডব্লিউটিএ এর অধীনে থাকা এই ঘাটটি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পাইলিং ধসে গার্ডার ভেঙে ঘাটের অবস্থা নাজুক হয়ে এখানে জাহাজ ভিড়ছেনা সেদিকে কার নজর নাই। মালামাল খালাস এবং ট্রাকে লোড দিতে না পারায় দিনের পর দিন এখানকার শত শত শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

ঘাটটি সংস্কারে বিআইডব্লিউটিএ এর কাছে অনেকবার চিঠিপত্র আদান প্রদান করা হয়েছে তথাপি ও সংস্কারের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সংস্কারের অভাবে ঘাটের প্রায় ৩০০ ফিট নদী গর্ভে চলে গেছে। দ্রুত সংষ্কার কাজ শুরু করা না হলে ঘাটটি হয়তো এক সময় হারিয়ে যাবে।

খাদ্য গুদাম হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের (১৪২৫) সাধারণ সম্পাদক জামাল হাওলাদার বলেন, খুলনার ৪ ও ৫ নং ঘাটে জাহাজ নোঙ্গর কেন্দ্রিক হাজার হাজার শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করে। ঘাটের এই অবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে এই বিভাগের ব্যবসায় বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে এবং শত শত শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাবে। জামাল হাওলাদার আরো বলেন, গার্ডার ভেঙে ধ¦সে পড়ায় এখানে জাহাজ নোঙ্গর করার কোন উপায় নাই। সংখ্যায় কম যা কয়েকটি জাহাজ আসছে তাও অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া ঘাটের এই দুরবস্থায় অনেক শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আহত হচ্ছে। ঘাট কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যও চরম মন্দা যাচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ এর খুলনা প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী হারিচ আহমেদ পাটোয়ারী বলেন, ১৯৬০ সালে এই ঘাটটি নির্মাণ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বড় ধরনের সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে ঘাটের লোহাড় শীট পাইলগুলো লোনা পানিতে মরিচা পড়ে বড়বড় ছিদ্র হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ওই ছিদ্র দিয়ে জোয়ারের সময় পানি ঢুকে ভাটার সময় বের হয়ে যাওয়ার সময় বালুলিকুইড আকার বের হয়ে যাওয়ায় রাস্তা ও প্লাটফর্ম বসে যাচ্ছে। এতে করে ঘাট পার্শবর্তী রাস্তা ও প্লাটফর্ম ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তর এবং ঘাটের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ অফিসে এসে লিখিতভাবে জানালে বিআইডবি¬উটিএ এর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সরেজমিন পরিদর্শন করেছে । ঘাটের বড় একটি অংশ নদীগর্ভে ধ্বসে পড়ায় জরুরী ভিত্তিতে লোহাড় শীট পায়লিং করে গার্ডার মেরামত করা প্রয়োজন। ক্ষতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে একটি রিপোর্ট নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রকৌশল বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ, খুলনা থেকে প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত/ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।