২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ১৪৫টি মামলার ১৪ মাসে একটিরও তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। তবে চলতি মাসেই কয়েকটির চার্জশীট দেয়া হতে পারে বলে মনে করছেন এসএমপি কর্তৃপক্ষ।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ, সিলেট জেলা পুলিশ ও কোর্ট সূত্রে জানা যায়, এসব মামলায় ৯ হাজার ৯২৫ জন এজহারনামীয় আসামীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে এসএমপি’র মামলা-আসামী ও গ্রেফতার বেশি রয়েছে। মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু না হওয়াতে ইতিমধ্যে অনেক আসামী জামিনে বের হয়ে পলাতক রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব আসামীদের মধ্যে অনেকেই নানা নাশকতামূলক, মাদক ব্যাবসা ও তীর খেলাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়াচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুলাই-২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৭ জন, বিয়ানীবাজার উপজেলার ৪ জন ও সিলেট সদর উপজেলার ২ জন শহীদ হয়েছেন। আর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দিনাজপুরের রুদ্র সেন শহীদ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। আলোচিত এসব মামলার অগ্রগতি নিয়ে শহীদদের পরিবারে হতাশা রয়েছে।

এসএমপি সূত্রে জানা যায়, সিলেট নগরীতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসএমপি’র কোতয়ালী মডেল থানা, দক্ষিণ সুরমা থানা, মোগলাবাজার থানা, শাহপরাণ থানা, এয়ারপোর্ট থানা ও জালালাবাদ থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ১০৪ টি মামলা হয়েছে। ৬ টি থানার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে কোতোয়ালী মডেল থানায়। সেখানে ৭৩ টি মামলায় ৫ হাজার ৫০৮ জনকে আসামী করা হয়েছে ও গ্রেফতার করা হয়েছে ৩২৬ জনকে। আর সবচেয়ে কম ১ টি মামলা হয়েছে মোগলাবাজার থানায়। সেখানে ১৪৫ জনকে আসামী করা হয়েছে এবং পুলিশ এ পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। নগরীর জালালাবাদ থানায় ৬ টি মামলায় ৩২০ জনকে আসামী এবং গ্রেফতার হয়েছেন ২৪ জন, এয়াপোর্ট থানায় ২ টি মামলায় ১২৫ জন আসামীর মধ্যে এজহারনামীয় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে অজ্ঞাত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা থানায় ১৩ টি মামলায় ৫১২ জন আসামীর মধ্যে ৬১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর শাহপরাণ (র.) থানায় ৯ টি মামলায় ৬৪৭ জন আসামীর মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে, সিলেট জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রজনতার ওপর হামলার প্রতিবাদে এ পর্যন্ত সিলেট জেলা পুলিশের ১১টি থানায় ৪১ টি মামলা করা হয়েছে। আর এজহারনামীয় আসামী করা হয়েছে ২ হাজার ৬৬৮ জনকে এবং গ্রেফতার করা হয়েছে ১৫৫ জনকে। এর মধ্যে ১১ টি হত্যা মামলা। যেগুলোর ৩টি জেলা পুলিশ এবং ৮ টি পিবিআই ও সিআইডি তদন্ত করছে। ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত এই মামলা করা হয়।

সিলেটের সবচেয়ে বেশি শহীদদের এলাকা গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মামলাও হয়েছে। গোলাপগঞ্জে ১৫ টি মামলায় ১ হাজার ৩১১ জনের নামোল্লেখ করে ও ১ হাজার ৩৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আর এজাহারনামীয় ৪৯ জন ও অজ্ঞাত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১৫৬ জনের নাম উল্লেখ ও ৬০০/৭৯০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা ৫টি মামলায় এ পর্যন্ত ৬ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জকিগঞ্জ উপজেলায় ৪ টি মামলায় ৩০১ জনের নামোল্লেখ করে ও ৭০০/৯০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। সেখানে এজাহারনামীয় ৪১ জন ও অজ্ঞাত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কানাইঘাট উপজেলায় ১৩৬ জনের নামোল্লেখ ও ২১৮ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে ৩টি মামলায় এজাহারনামীয় ১ জনকে আটক করা হয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৪টি মামলায় ২১৭ জনের নামোল্লেখ ও ৪৫০/৬৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। আর গ্রেফতার করা হয়েছে এজাহারনামীয় ৫ ও অজ্ঞাত ১ জনকে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৩টি মামলায় ১৩১ জনের নামোল্লেখ ও ৪০৭ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। এ মামলায় এজাহারনামীয় ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ওসমানীনগর উপজেলায় ১টি মামলায় এজাহারনামীয় ১০৬ জন ও অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনকে আসামী করলেও এপর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বালাগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায়ও একই অবস্থা। বালাগঞ্জে একটি মামলায় ৪৬ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে। আর জৈন্তাপুর উপজেলায় একটি মামলায় ১২ জনের নামোল্লেখ ও ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাত রেখে মামলা হলেও কাউকে আটক করা হয়নি।

বিশ্বনাথ উপজেলায় ১৯১ জনের নাম উল্লেখ ও ১১০/১৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে ২ টি মামলা করা হয়েছে। যেখানে এজাহারনামীয় ৪ জন ও অজ্ঞাত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ২ টি মামলায় ৬১ জনের নামোল্লেখ করে ৯০/১০০ জনকে অজ্ঞাত রেখে করা মামলায় এ পর্যন্ত এজাহারনামীয় ৫ জন ও অজ্ঞাত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিলেটের পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, ‘এসএমপি’র ৬টি থানায় যেসব মামলা হয়েছে সকল মামলা আমি গুরুত্ব সহকারে মনিটরিং করতেছি।’ চলতি মাসেই কয়েকটি মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হবে বলে আশা করছেন এসএমপি’র এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, ‘২৪ এর গনঅভ্যূত্থানে সিলেট জেলার বিভিন্ন থানায় অনেকগুলো মামলা হয়েছে এবং জেলা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআইও মামলাগুলো তদন্ত করছে।’ গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের হত্যা মামলাগুলোর চার্জশীট এক মাসের মধ্যে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার। এছাড়া তিনি আরও বলেন, ‘এসব মামলার চার্জশীট দাখিলের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছে জেলা পুলিশ।’