খুলনার শস্য ভান্ডার খ্যাত উপজেলা ডুমুরিয়ায় এবারও শীতকালীন শাকসবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। এই উপজেলায় এবার প্রায় ২৫০ কোটি টাকার শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছে। সবজি উৎপাদন, বীজ উৎপাদন ও সবজি আবাদে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে সফলতা পেয়েছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা।
ভালো উৎপাদনের পাশাপাশি ডুমুরিয়ায় গড়ে উঠেছে শাকসবজির বাজার। সারা বছরই ডুমুরিয়ায় সবজির আবাদ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয় শীতকালে। নিরাপদ ও বালাই মুক্ত ডুমুরিয়ার সবজি বিদেশে রফতানিও করা হচ্ছে। নিজেদের কষ্টার্জিত সবজি বিদেশে রফতানি হওয়ায় মহাখুশি এ অঞ্চলের কৃষকরা।
ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, ভালো দাম পাওয়া প্রতি বছর শাকসবজির আবাদ বাড়ছে। বিশেষ করে আগাম জাতের শাকসবজি আবাদ করে ভালো লাভ পাওয়া যাচ্ছে।
অনুকূল আবহাওয়ায় সবজির উৎপাদন ভালো হওয়া ও বাজার দর ভালো পেয়ে লাভবান হয়েছেন চাষিরা। শুধু নিজেদের চাহিদাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। সবুজে সবুজে ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি লাউ, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, মরিচ, লালশাক, মূলা শাক, পালং শাক, লাউ শাকসহ হরেক রকমের শীতকালীন সবজি। তাই মাঠে মাঠে এসব ফসল পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত কৃষকরা। কাক ডাকা ভোরে কোদাল, নিড়ানি, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন কৃষকরা। সন্ধ্যা অবধি মাঠে থেকে চারার গোড়ায় পানি ঢেলে, গাছের পরিচর্যা করে সবাই বাড়ি ফিরছেন। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে কোদাল চালাচ্ছেন। নানা জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন স্থানীয় কৃষকরা। ডুমুরিয়ার খর্ণিয়ার কৃষি পদকপ্রাপ্ত দেশ সেরা সবজি চাষি আবু হানিফ মোড়ল বলেন, শীতকালীন শাকসবজির ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে ফুলকপি, ওলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, সিম, বেগুন, লাল শাক। এ বছর দামও ভালো পাচ্ছি। শোভনার মলমলিয়া গ্রামের কৃষক কামাল বাওয়ালী বলেন, শীতকালীন শাক সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। সিম, টমেটো, ওলকপি চাষ করেছিলাম। ৬ বিঘার ঘেরের ভেড়িতে এসব সবজি চাষ করেছিলাম। দাম ভালো পেয়েছি। ডুমুরিয়ার সবজি এখন বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলার ৪ নম্বর খর্ণিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর বামুন্দিয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম বলেন, ডুমুরিয়ার কৃষককে সার, বীজ প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। এতে ফলন হচ্ছে বাম্পার। এখানের কৃষকরা সারা দেশে ফসল উৎপাদনের দিক দিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। এ উপজেলার বিষমুক্ত সবজি এখন বিদেশে যাচ্ছে। যা আমাদের জন্য খুবই খুশির খবর।
এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইনসান ইবনে আমিন বলেন, ডুমুরিয়া উপজেলায় শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। শীতের সবজিতে দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। নানা জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন হাজারও কৃষক। এবার উপজেলায় ৩৬৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজির আবাদ করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিম ৩৮০ হেক্টর, টমেটো ২২০ হেক্টর, ৩৬০ হেক্টর বেগুন, ২৬০ হেক্টর ফুলকপি। ডুমুরিয়ার সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে সরাসরি ঢাকার কাওরানবাজারে যায়। এছাড়া ইতালি, ইংল্যান্ড, কোরিয়ায় এখানের সবজি রফতানি করা হয়। এবার প্রায় ২৫০ কোটি টাকার শীতকালীন শাকসবজি উৎপাদন করা হয়েছে ডুমরিয়ায়।