সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট বিভুরঞ্জন সরকারের (৭১) লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পুলিশ ও স্বজনদের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্ত সম্পন্নকারী চিকিৎসক। বেলা ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শেখ মো. এহসান ময়নাতদন্ত শুরু করেন।

ময়নাতদন্ত শেষে ডা. শেখ মো. এহসানুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, লাশটি পানি থেকে উদ্ধার হয়। লাশ হালকা পচনশীল ছিল। আমরা যতদূর দেখেছি, শরীরের বাইরে ও ভেতরে আঘাতের চিহ্ন নেই। তারপরও শরীরের (দাঁত, চুল, লিভার, কিডনি, পাকস্থলীর) কিছু অংশ নিয়েছি। এগুলো ফ্রিজিং করে ঢাকায় পাঠানো হবে। প্রতিবেদন আসার পরে আমরা চূড়ান্ত মন্তব্য দিতে পারবো।

বিভুরঞ্জন সরকার দৈনিক আজকের পত্রিকায় জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ১০টার দিকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরোনোর পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তার নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়ে সেদিন রাতে রমনা থানায় জিডি করেন তার ছেলে ঋত সরকার। বিভুরঞ্জন সরকারের স্বজনেরা জানান, লাশ বুঝে পাওয়ার পর তারা ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িতে নিয়ে যাবেন, সেখান থেকে শেষকৃত্যের জন্য রাজধানীর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমন্দির ও শ্মশানে নেওয়া হবে।

বিভুরঞ্জন সরকারের ছেলে ঋত সরকার জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তিনি মোবাইল ফোন বাসায় রেখে যান। অফিসে যোগাযোগ করা হলে সেখানেও তিনি যাননি বলে জানানো হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে রমনা থানায় একটি নিখোঁজের জিডি করা হয়। কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ পাঠান জানান, শুক্রবার বিকেলে বলাকির চর এলাকার মেঘনা নদীতে লাশটি ভাসছিল। পরে স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে ফোনে করে তাদের জানান। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে লাশটি উদ্ধার করেন। সন্ধ্যার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

এরমধ্যে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ‘খোলা চিঠি’ শিরোনামে বিভুরঞ্জন সরকারের একটি লেখা প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায় চিঠিটি তিনি তাদের ই-মেইল করেছিলেন। ‘জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন’ ফুটনোট দেওয়া ওই লেখায় বিভুরঞ্জন সরকার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের নানা ঘটনা, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও গণমাধ্যম পরিস্থিতি, নিজের ও ছেলের অসুস্থতা, মেডিকেল পাস সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের উচ্চতর পরীক্ষায় ‘ফেল করা’, বুয়েট থেকে পাস করা ছেলের ‘চাকরি না হওয়া’ এবং নিজের আর্থিক দৈন্য নিয়ে হতাশার কথা উল্লেখ করেন।