স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। আর বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যর্থ হলে ঐ মেগা প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন।

সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুর ১২টায় শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ ও দাবি জানান গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ রুস্তম আলী, মাহফিজুর রহমান বাবু, প্রমথ মহালদার, সুজন মণ্ডল প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালী, আটুলিয়া ও কাশিমাড়ী এলাকার নদ-নদী ও খালঘেঁষা অংশগুলো ভয়াবহ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। অথচ সরকারিভাবে এসব এলাকায় কোনো বালুমহাল নির্ধারণ করা হয়নি। বরং আশাশুনি উপজেলার হিজলিয়া চরের পাঁচ একর জমিকে ১৪৩২ সালের জন্য বালুমহাল ঘোষণা করা হয়েছে।

উক্ত বালুমহালের ইজারা পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি জগলুল হায়দারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আব্দুর রহমান বাবু এবং শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনোয়ারুল ইসলাম আঙুর।

তবে অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত বালুমহাল অনেক দূরে হওয়ায় বাবু ও আঙুরের লোকজন শ্যামনগরের দুর্গাবাটি, জেলখালী, ঝাপা, বিড়ালাক্ষ্মী, জেলিয়াখালীসহ বিভিন্ন ভাঙনপ্রবণ অংশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। স্থানীয়রা বাধা দিলেও তাদের ভয়ভীতি ও চাঁদাবাজির মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, প্রতিদিন রাতে ৩০ থেকে ৩২টি কার্গো, বোট ও বডির মাধ্যমে এসব এলাকা থেকে বালু লুট করা হচ্ছে। বিষয়টি বুড়িগোয়ালিনী নৌ-থানার ওসিকে জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেন না। বরং বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বালু উত্তোলনে পরোক্ষ সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে আনোয়ারুল ইসলাম আঙুর সাংবাদিকদের বলেন, “আমার লোকদের নিষেধ করা হলেও মাঝে মাঝে তারা এমন ভুল করছে। নির্ধারিত চর কিছুটা দূরে হওয়ায় অনেক সময় কিছু বোট মালিক এমন দুষ্টামি করে। তাদের আবারও কঠোরভাবে নিষেধ করা হবে।”

অভিযোগের বিষয়ে বুড়িগোয়ালিনী নৌ-থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত অনেক অভিযোগ পাই। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া আমরা সরাসরি মুভ করতে পারি না। আবার অভিযান পরিচালনার খবর পেলে অনেক সময় বালুখোররা আগেই পালিয়ে যায়।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রিন্স রেজা বলেন, “ভাঙনকবলিত স্থান থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বাঁধের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করব।”

এদিকে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন বলেন, “আমি ইতোমধ্যে একবার অভিযান পরিচালনা করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের পাশ থেকে আবারও বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়দের দাবি, যদি দ্রুত এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না করা হয়, তবে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের এই বাঁধ আবারও ভাঙনের মুখে পড়বে। তাই বাঁধ রক্ষায় বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে তারা নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবি জানাতে বাধ্য হবেন।