কোন কিছুই বুঝে ওঠার আগেই ঘুম থেকে টেনে হেঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে প্রধান সড়কে এনে অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। সেখানে দুই জন পা পাড়িয়ে ধরে, চারজন হাত, একজন মাথা মাটির সঙ্গে চেপে ধরে বাকিরা শুধু পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।’ গত ৪ অক্টোবর রাতে চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন খুলনার সরকারি আযমখান কমার্স কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ তারেক রহমান। শরীরের একপাশ জুড়ে দগদগে ক্ষত দেখিয়ে বলেন, ‘ঘাটে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় পিতাকে খুঁজতে এসেছিল পুলিশ। তাকে না পেয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। সমন্বয়ক পরিচয় শুনে বেশি মেরেছে তারা।’ ‘গভীর রাতে হঠাৎ আমাদের বাড়িতে পুলিশ ও যৌথবাহিনীর সদস্যরা প্রবেশ করে আমাকে ও ছোট ভাগ্নেকে ঘুম থেকে তুলেই মারপিট শুরু করে তারা। এর মধ্যে সেখানে প্রবেশ করেন খুলনা সদর থানার সেকেন্ড অফিসার নান্নু মন্ডল। তিনি অন্যদের বলেন, এ তো ছাত্র সমন্বয়ক। এরপর ভাগ্নেকে রেখে সবাই আমাকে পেটানো শুরু করেন। কেন মারা হচ্ছে, আমার অপরাধ কী প্রশ্ন করার সুযোগ পাইনি। নির্যাতনের শিকার তারেক জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি বর্তমানে কমার্স কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি। নগরীর ঘাট এলাকার গ্রীণল্যান্ড আবাসিকে তারেকদের বাড়ি। গত দুই দিন ঘাট শ্রমিক, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই এলাকায় এবাদুল নামের এক শ্রমিকের মোটর সাইকেলের কাগজপত্র চেক করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়ায় শ্রমিকরা। পরে শ্রমিকরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল ছোড়াছুড়িতে পুলিশ-শ্রমিক উভয় আহত হন। গভীর রাতে ২১ নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি আবু তালেব মোল্লার বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। তাকে না পেয়ে ছেলে তারেক, কিশোর নাতি হৃদয় হাওলাদার এবং এবাদুলের ভাই শহিদুল হাওলাদারকে আটক করে। এ ঘটনায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক এবাদ আলী বাদি হয়ে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় তারেককে ১ নং, নাতি হৃদয়কে ৩ নং এবং তালেব মোল্লাকে ৫ নং আসামী করা হয়েছে। সাক্ষী ১৩ জনই পুলিশ। দুই দিন প্রিজন সেলে থাকার পর গত ৬ এপ্রিল এই মামলায় জামিন পেয়েছেন তারেক ও হৃদয়।
গ্রাম-গঞ্জ-শহর
ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় শুনে নির্যাতন আরো বাড়ে
কোন কিছুই বুঝে ওঠার আগেই ঘুম থেকে টেনে হেঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে প্রধান সড়কে এনে অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। সেখানে দুই জন পা পাড়িয়ে ধরে, চারজন হাত, একজন মাথা মাটির সঙ্গে চেপে ধরে বাকিরা শুধু পেটাতে থাকে।