বড়লেখা (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা: মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক ও জলপ্রপাতের ছড়ার তীরে বনবিভাগের আরসিসি রিটেইনিং দেওয়াল নির্মাণে ছড়ার বিপরীত তীরবর্তী ১০ আদিবাসি খাসিয়া পরিবারের বসতঘর ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে।

ছড়ার তীরে পর্যাপ্ত জায়গা থাকা স্বত্ত্বেও ছড়ার মাঝখানে দেওয়াল নির্মাণের কারণে বিপরীত তীরের বাড়িঘর পাহাড়ি ঢলে ছড়াগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ ৪/৫ ফুট উত্তরে সরিয়ে দেওয়াল নির্মাণ করলে শঙ্কামুক্ত থাকতো তীরবর্তী খাসিয়া বাড়িগুলো। প্রায় দুই মাস ধরে ভোক্তভোগিরা বনবিভাগের কর্মকর্তা ও ইউএনও’কে মৌখিকভাবে বিষয়টি অবহিত করে আসলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, সিলেট বন বিভাগ মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক ও জলপ্রপাতের মাধবছড়ার একপাশে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সিলেট বনবিভাগে বনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ মিটার দীর্ঘ ও গড় উচ্চতা ১১ ফুটের আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের প্রকল্প গ্রহন করে। কিন্তু মাধবছড়ার তীরেই রয়েছে আদিবাসি খাসিয়া সম্প্রদায়ের পুঞ্জি। ছড়ার তীরেই রয়েছে ১০টি খাসিয়া পরিবারের বসতবাড়ি। বনবিভাগ ছড়া তীরবর্তী এই ১০ পরিবারের বাড়িঘর রক্ষার কোনো পরিকল্পনা না নিয়ে বিপরীত তীরে পর্যাপ্ত জায়গা থাকা স্বত্ত্বেও অনেকটা ছড়ার মাছখানে আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে। এতে ভারিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খাসিয়াদের বাড়িঘর ভেঙ্গে ছড়াগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিনে গেলে মাধবপুঞ্জির হেডম্যান (মান্ত্রী) ওয়ানবর এল.গিরি জানান, বনবিভাগ ছড়া তীরবর্তী বাসিন্দাদের বসতঘর ভাঙনের হুমকির মুখে রেখে অপরিকল্পিত ডিজাইনে দেওয়াল নির্মাণ করতেছে। ছড়ারতীরে একপাশে প্রচুর জায়গা রেখে দেওয়াল নির্মাণ করায় ১০ খাসিয়া পরবিারের বাড়িঘর পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। ভাঙনে বাস্তুহারার আশঙ্কায় রয়েছেন, বিনিং লাপাসাম, কল্পনা সার্তি, প্রনতি ইয়াং, ইয়ুং, জনজলী মারলিয়া, জ্যাতিলা হাজং, এমিলি মুখিম, বেরনিকা খাইন, নিবিং পঃসেনেম, লিটন বুনার্জি, আইলিন। কাজ শুরুর আগে অনেকবার বনবিভাগের কর্মকর্তাদের বলেছি মাত্র ৪/৫ ফুট সরিয়ে দেওয়াল নির্মাণ করলে তাদের ১০টি বসতঘর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু তারা বলে, পরে ওই তীরে অরেকটি প্রকল্প নিয়ে দেওয়াল নির্মাণ করে দিবে। আমাদের বাড়িঘর বিলীন হওয়ার পর প্রকল্প নিলে আমাদের কি লাভ হবে। ইউএনও’কে মৌখিকভাবে বলেছি, এইভাবে দেওয়াল নির্মাণের কারণে আমাদের ১০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বে। মাত্র ৪/৫ ফুট সরিয়ে দেওয়াল নির্মাণ করলে বেচে যাবে বাড়িঘরগুলো। ইউএনও ব্যবস্থা নিতে বললেও বনবিভাগ তা শুনেনি।

বনবিভাগের সহকারি বনসংরক্ষক রেজাউল ইসলাম মৃধা জানান, মাধবছড়ার একতীরে আরসিসি রিটেইনিং দেওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। অপরতীরের একাংশে খাসিয়াদের ১০টি পরিবারের বাড়িঘর রয়েছে। এগুলোর ভাঙ্গন রোধে পরবর্তীতে গাইডওয়াল নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হবে।