রাজধানীর ঝিগাতলা পুরাতন কাঁচা বাজারের পাশে একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে এনসিপি নেত্রী জান্নাত আক্তার রুমীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনার নেপথ্যে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েও পুলিশের সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জুলাই রেভ্যুলেশনারী অ্যালায়েন্স এমন দাবি করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঝিগাতলা পুরাতন কাঁচাবাজার জান্নাতী ছাত্রী হোস্টেল থেকে রুমীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
জুলাই রেভ্যুলেশনারী অ্যালায়েন্সের দাবি, গত নভেম্বরে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণার দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এক নারী আওয়ামী লীগ দাবি করে কথা বলে। ওই ঘটনায় জান্নাত আক্তার রুমী সেই নারীকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনার পর থেকে প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ মোবাইল ফোনে সাইবার বুলিং, ধর্ষণ ও হুমকির শিকার হচ্ছিলেন। তাদের দাবি, সর্বশেষ গত এক মাস যাবৎ এ ঘটনা নিয়ে তার সহপাঠীরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে রুমীর পাশে থাকার। কিন্তু সাইবার বুলিং আর ফোন কলে সারাদিন থ্রেট পাওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। তবে কারোর কল্পনাতেও ছিলো না, বুলিংয়ের মাত্রা এত তীব্র যে সে আত্মহননের পথ বেছে নেবে। নিহতের খালাতো ভাই সোয়েইব হোসেন জানান, জান্নাত আরা রুমী ঢাকায় ওই ছাত্রী হোস্টেলে একাই থাকতেন। তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান আছে। তারা দুজনই নওগাঁয়ের গ্রামের বাড়িতে বসবাস করে। রুমী একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে চাকরি করত। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। পরে এনসিপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়।
এদিকে হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ঝিগাতলা পুরান কাঁচা বাজারের পাশে একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে রুমীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যাকা-, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান বলেন, সকালে হোস্টেলের কাজের বুয়া রুমের দরজায় ধাক্কা দিলে দরজা খুলে যায়। ভেতরে ঢুকে তাকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলতে দেখা যায়। পরে হোস্টেল কর্তৃপক্ষ থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে জান্নাত আরার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা। সেখানে তিনি জানান, গত মাসে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়ের দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জিয়ার কবর খুঁড়তে চাওয়া রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একজনকে পিটিয়ে পুলিশের কাছে দিয়েছিলেন জান্নাত আরা। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ জান্নাত আরাকে সাইবার বুলিং, হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছিলেন বলে তারেক রেজা তার পোস্টে জানান। ওই পোস্টে তারেক রেজা আরও লেখেন, এ কারণে জান্নাত আরা রাতে আত্মহত্যা করেছে। ফেসবুকে দেওয়া ওই পোস্টে তারেক রেজা আরও লিখেছেন, এটাকে আমরা আত্মহত্যা হিসেবে দেখতে রাজি নই। এটা খুন। যারা আমার বোনের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে, তাদের জীবন আমরা শান্তিতে কাটাতে দেব না।