নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা : নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশনের কয়েকটি ওয়ার্ডে দীর্ঘ দিন যাবৎ গ্রহকরা বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে ভুগছেন। পাম্প বিকল ও কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শোধনাগারের সরবরাহ করা পানি দূষিত ও ব্যবহারের অনুপযোগি। ফলে গ্রাহকরা মসজিদ ও পার্শ্ববর্তী নৌবাহিনী পরিচালিত ডকইয়ার্ডসহ নানা প্রতিষ্ঠান থেকে পানি সংগ্রহ করে জীবন ধারণ করছে। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে দূষিত পানি পান করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ওয়াসা’র কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শোধনাগার থেকে সুফল পাচ্ছে না গ্রাহকরা। সিটি করপোরেশনের উদাশীনতা আর শোধনাগারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্ব-কর্তব্যহীনতায় বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। সিটি সাবেক কাউন্সিলর বললেন সাবেক মেয়র আইভীর কাছে বারবার ধরণা দিয়েও কোন ফল হয়নি। পানি সরবরাহের সমস্যা দ্রুত সমাধানে প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।

১৯২৯ সালে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে কদম রসূল অঞ্চলে নির্মাণ করা হয় সোনাকান্দা পানি শোধানাগার। গ্রাহকদের দাবি অনুযায়ী ওয়াসা প্রায় ৮৭ বছরের সেই পুরণ শোধানাগার ২০১৬ সালে নির্মাণ করা হয় নতুন রূপে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডে প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয়ে সোনাকান্দা পানি শোধনাগার নির্মাণ করে কর্তৃপক্ষ। যা ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শোধনাগারটি উদ্বোধন করা হয়। এ শোধনাগারটি উদ্বোধন হলেও একমাত্র পাম্পটি বিকল হওয়ায় এবং নদীর পানি পরিপূর্ণ শোধন না হওয়ায় গ্রহকরা এর সুফল পাচ্ছে না। বিশুদ্ধ পানি সরবরাগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৯ সালের শোধানাগারের দায়িত্ব গ্রহণ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ মডস জোন সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের প্রায় ছয় বছরেও গ্রাহকরা বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন। সিটি করপোরেশনের পুরো এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট হলেও ১৯, ২০, ২১, ২৩ ও ২৪ নং ওয়ার্ডের সমস্ত এলাকাসহসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় এ সংকট বেশি। এসব এলাকায় দীর্ঘ দিন যাবৎ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে না। গ্রাহকদের অভিযোগ সিটি করপোরেশনের উদাশীনতা আর শোধনাগারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্ব-কর্তব্যহীনতায় বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না। পানির রং কালসে ও পোকা থাকে বলেও গ্রাহকদের অভিযোগ। বাধ্য হয়েই এ দূষিত পানি পান করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিছুদিন পরপর এমন সমস্যা ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কটে চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। শোধনারের পাম্প বিকল হওয়া সহ নানা কারণ দেখিয়ে ২০ নং ওয়ার্ডে সোনাকান্দা, দড়িসোনাকান্দা, বেপারীপাড়া, ফরাজিকান্দাসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আবার পাম্পটি সচল হলেও ওয়ার্ডেও একাংশ নীচু দিকে পানি যায়। আর অপর বড় অংশে পাম্পের পানি যায় না। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্যহীনতায় দীর্ঘ সময়েও এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সরবরাহ করা দূষিত পানি পানের অনুপযোগি হওয়ায় এলাকাবাসী স্থানীয় মসজিদ, পার্শ¦বর্তী নৌবাহিনী পরিচালিত ডকইয়ার্ড সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নানা ভাবে পানি সংগ্রহ করে জীবন ধারণ করছে। অনেকে অর্থের অভাবে কারো মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করতে না পেরে বাধ্য হয়েই এ দূষিত পানি পান করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেনের ২০ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহেনশাহ্ আহম্মেদ পানি সংকটে গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে জানিয়ে সাবেক এ জনপ্রতিনিধি বলেন, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আইভীর কাছে বারবার ধরণা দিয়েও কোন ফল হয়নি। সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

কোন কোন এলাকায় গ্রাহকদের পানি সংকটের কথা স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পানি সরবরাহ সমস্যা দ্রুত সমাধান প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জাইকার অর্থায়নে নতুন করে উন্নতমানের ২০ পাম্প স্থাপন করব। আর এ সময়ে যেসব জায়গায় পানির সমস্যা হবে সেখানে গাড়ির মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হবে বলেও তিনি জানান। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩১ হাজার ৭শ’ ২০ জন গ্রাহক রয়েছে। আগে রাত ৮টা থেকে ১২টা। আবার রাত ২ টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিপটিউবয়েল পানি সরবরাহ করা হত। আর শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দিনে তিন বেলা ৬-৮ ঘন্টা সরবরাহ করত। এখন নদীর পানি মাত্র দিনে ৩ ঘন্টা সরবরাহ করে থাকে। ফলে সংকট আরো বেড়েছে।