চট্টগ্রামে নতুন করে গতি পাচ্ছে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। দেশের একমাত্র মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে স্থাপিত হয়েছে আধুনিক পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগার। শনিবার (২৮ জুন) উদ্বোধন হতে যাচ্ছে সংস্থাটির নতুন দশতলা ভবন। এতে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট মহলে স্বস্তির আবহ বিরাজ করছে।
দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের অনেক পরীক্ষার জন্য ঢাকা নির্ভর করতে হতো। এতে সময় ও অর্থ দুটোই ব্যয় হতো বেশি। নতুন ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে সে নির্ভরতা এখন কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আগে বিএসটিআই চট্টগ্রাম ল্যাবে ৯২টি পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা ও ২৪টি পণ্যের ফিজিক্যাল পরীক্ষা করা যেত। এখন বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্ত সব পণ্যের মান পরীক্ষা চট্টগ্রামেই করা যাবে। নতুন পরীক্ষাগারে পানি, দুধ, ত্বকের প্রসাধনী, শিশু খাদ্য, কাগজ, সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল, চকলেট, শ্যাম্পু, জুস, পেট্রোলিয়াম পণ্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্যের মান যাচাই সম্ভব হবে।
বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দেশজুড়ে ৩১৫টি পণ্যের মান নজরদারিতে রাখছে। এর মধ্যে শিল্পপণ্য, খাদ্য, কৃষিপণ্য ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী রয়েছে।
তবে পূর্ণাঙ্গ ল্যাব স্থাপন হলেও জনবল সংকটে এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কাজ হচ্ছে না। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগের পাশাপাশি রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায়ও মনিটরিংয়ের দায়িত্ব রয়েছে কার্যালয়টির ওপর। কিন্তু মাঠপর্যায়ে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কার্যক্রমে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
বিশেষ করে সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম), টেস্টিং কেমিক্যাল, টেস্টিং ফিজিক্যাল এবং মেট্রোলজি—এই চার বিভাগ দিয়েই মূল কার্যক্রম চালানো হয়। কিন্তু জনবলের দিক থেকে প্রতিটি বিভাগই সংকটে। মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত কর্মীর সংখ্যা সীমিত থাকায় তদারকিতে দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনুমোদনহীন লোগো ব্যবহার করে মেয়াদহীন ও ভেজাল পণ্য বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানি বলেন, “নতুন দশতলা ভবনে স্থাপিত পূর্ণাঙ্গ ল্যাবরেটরি আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। অনেক দিন ধরে আমরা এই ল্যাবের অপেক্ষায় ছিলাম। ঢাকার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার জন্যই এই ল্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এসে গেছে, স্থাপনও প্রায় শেষ। একইসঙ্গে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে এই ল্যাবরেটরি শুধু চট্টগ্রামেরই নয়, পুরো দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরাও মনে করছেন, এই উদ্যোগের ফলে দ্রুত রিপোর্ট পাওয়া যাবে এবং খরচ কমবে। একই সঙ্গে পণ্যের গুণগত মানও বজায় রাখা সহজ হবে।
চট্টগ্রামে বিএসটিআই’র এই উদ্যোগ দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীর মান নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা আরও একধাপ এগিয়ে নেবে বলে প্রত্যাশা।