মমতাজ উদ্দীন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান): আগামী জানুয়ারি মাস থেকে বান্দরবানের ম্রো জনগোষ্ঠীর আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণ এবং ড্রাইভিং শেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন আলীকদম জোন এই বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।

গতকাল ১৫ নভেম্বর আলীকদম উপজেলার ম্রো কল্যাণ ছাত্রাবাস হলরূমে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বান্দরবান রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রাকিব ইবনে রেজওয়ান, এএফডব্লিউসি, পিএসসি এই ঘোষণা দেন।

কমিউনিটি ট্যুরিজমে ম্রো জনগোষ্ঠীর মালিকানা জরুরি: মতবিনিময় সভায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রাকিব ইবনে রেজওয়ান আরও বলেন, দুর্গম এলাকায় কমিউনিটি ট্যুরিজম গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে ম্রো জনগোষ্ঠীর ওনারশীফ (মালিকানা) থাকতে হবে। বাইরের কারো বিনিয়োগ নিয়ে এই ট্যুরিজম গড়ে তোলা যাবে না। তবে যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণের আগে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা ও শিক্ষার ওপর জোর: প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা, ভোকেশনাল ট্রেনিং এবং ট্যুরিজম বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং উপস্থিত জনগোষ্ঠীর কার্বারী ও সচেতন নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই ম্রো জনগোষ্ঠী এই জনপদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তাই সেনাবাহিনীও এই জনগোষ্ঠীর কল্যাণে তাদের প্রতিদান অব্যাহত রেখেছে।

তিনি সীমান্ত নিরাপত্তা, অস্ত্র, মাদক এবং বনজদ্রব্য চোরাচালান রোধে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য ম্রো জনগোষ্ঠীকে আহ্বান জানান এবং এসব কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য অনুরোধ করেন। কারো প্ররোচনায় আইন বিরোধী কাজে জড়িত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি অনগ্রসর ম্রো জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রাকিব নিজ সন্তানদের পড়ালেখামুখী করানোর ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে বলেন, ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হলে ম্রো জনগোষ্ঠীর মুখ উজ্জ্বল করবে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলীকদম জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল শওকাতুল মোনায়েম, পিএসসি, নবাগত জোন কমান্ডার লে. কর্নেল আশিকুর রহমান আশিক, এসপিপি, পিএসসি, আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আলম, থানার অফিসার ইনচার্জ মির্জা জহির উদ্দিন, ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো এবং আলীকদম প্রেসক্লাব সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমদ।

সেনা তত্ত্বাবধানে ম্রো কল্যাণ ছাত্রাবাস:

উল্লেখ্য, ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে আলীকদম সেনা জোনের তত্ত্বাবধানে বান্দরবান রিজিয়নের আর্থিক সহায়তায় আলীকদম ম্রো কল্যাণ ছাত্রাবাসটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ছাত্রাবাস আবাসিক সুবিধা দিয়ে ম্রো শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুযোগ করে দিয়েছে, যার ফলে ম্রো শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে।