গ্রাম-গঞ্জ-শহর
কেসিসি মার্কেট ঘিরে বিশাল জালিয়াত সিন্ডিকেট
৩০ মিনিটেই পাওয়া যায় ৭০ বছরের পুরনো জমির ভুয়া দলিল
খুলনা জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া। দেশ বিভক্তির সময় এ অঞ্চলে বসবাসরত বেশ কিছু হিন্দু পরিবার পাড়ি জমায় ভারতে। পূর্বে যাদের স্থায়ী ঘরবাড়ি ছিল ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটায়।
Printed Edition
খুলনা জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া। দেশ বিভক্তির সময় এ অঞ্চলে বসবাসরত বেশ কিছু হিন্দু পরিবার পাড়ি জমায় ভারতে। পূর্বে যাদের স্থায়ী ঘরবাড়ি ছিল ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটায়। তাদের রেখে যাওয়া হাজার হাজার বিঘা ভূ-সম্পত্তির অধিকাংশই এখন অন্যদের দখলে। কেউ খাস সম্পত্তি হিসেবে লীজ নিলেও কেউবা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছেন জমির মালিক। একটি দালাল চক্র এ সকল জমির সন্ধানে থাকেন। সন্ধান মিললেই জমিদাতার তথ্য খুঁজে বের করেন। সে সঙ্গে শুরু হয় জাল কাগজপত্র তৈরির কর্মযজ্ঞ। তবে, প্রশাসনের নাকের ডগায় জাল-জালিয়াতির এই পসরা বসলেও নেয়া হয় না কোন পদক্ষেপ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সহজেই মিলছে ৫০ থেকে ৭০ বছর পূর্বের জমির মালিকের স্বাক্ষরকৃত দলিল। এই চক্রের একজন সদস্যের পূর্ব পুরুষের নাম, গ্রহীতা হিসেবে দেখিয়ে মুহূর্তেই তৈরী হয় দলিল। মাত্র ত্রিশ মিনিটের মধ্যে তৈরী করে দেওয়া হয় এই ভুয়া দলিল। এছাড়া ভুয়া কাগজ বানিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে। জাল-জালিয়াতির এই সিন্ডিকেট খুলনা জেলা পরিষদ সংলগ্ন কেসিসি মার্কেট ও এর আশ-পাশ এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে। বেশ কয়েকজন দলিল লেখক, কম্পিউটার অপারেটর, আদালতের মুহুরী, অনলাইন ভূমি সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি এই সিন্ডিকেটে সম্পৃক্ত।
শুধু তাই নয়। অনুসন্ধানে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। একটি চক্র সরকারি চাকরি, জমি কেনা বেচা ও ব্যবসায়ে বিনিয়োগসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় কয়েক লক্ষ টাকা। টাকা গ্রহণ করার সময় গৃহীত টাকার অঙ্ক উল্লেখ করে একটি ব্যাংক চেক প্রদান করে। পরবর্তীতে ঐ চক্রটি টাকা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায় চেকটি জাল। অত্যাধুনিক স্ক্যানিং প্রিন্টারের মাধ্যমে হুবহু চেক বানিয়ে ফেলে চক্রটি।
বটিয়াঘাটার গোপাল দাশ নামক একজন ব্যক্তি বলেন, “আমাদের জমি ৩ প্রজন্ম ধরে ভোগ দখল করে আসছি। হঠাৎ শুনি আমার ঠাকুর দা কাকে লিখে দিছে। পরে জানতে পারি সব কাগজ জাল। এদিকে একই উপজেলার মাথাভাঙায় একটি চক্র এই প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করে বেশ কয়েকটি জমি জোর করে দখল নিয়েছে। এ চক্রটি ওয়ারেশকায়েম সার্টিফিকেট, দলিল, নোটারী স্ট্যাম্প, এফিডেভিট কপিসহ বেশ কিছু জাল কাগজ তৈরী করে কেসিসি মার্কেট থেকে। তবে খুলনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন ও আদালত পাড়ার কয়েকটি দোকানও এই কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।