সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : পান-সুপারির সঙ্গে পরিচিত নন এমন মানুষ পাওয়া বিরল। হাজার বছরের ঐতিহ্যের অংশ এই সুপারি একসময় কেবল পান খাওয়ার পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এখন এটি বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতিতেই কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার অনেক শিল্পের সঙ্গেও কৃষির সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়ে থাকে, যার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলেই রয়েছে ২৫ শতাংশের বেশি।
একসময় বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক প্রয়োজনেই কয়েকটি সুপারি গাছ লাগানো হতো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। সময়ের পরিবর্তনে সুপারি হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক ফসল। সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া, পাটকেলঘাটা, ডুমুরিয়া, বিশেষ করে কপোতাক্ষ অববাহিকায় ব্যাপকভাবে সুপারি চাষ হচ্ছে। দেবহাটা ও কালিগঞ্জ উপজেলাতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উৎপাদন দেখা যাচ্ছে।
বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতিশতক সুপারি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ এমনকি ৫০০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতিটি সুপারি বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৫ টাকা দরে। দাম বাড়ার সাথে সাথে কৃষকরাও পাচ্ছেন ন্যায্য মূল্য। স্থানীয় বাজার ছাড়াও এই সুপারি রাজধানী ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি রপ্তানির বাজারেও সাতক্ষীরার সুপারি জায়গা করে নিচ্ছে।
সুপারি চাষ কৃষকের জন্য লাভজনক হওয়ার অন্যতম কারণ হলো এর সহজ উৎপাদন পদ্ধতি। সুপারি গাছের চারার দাম বর্তমানে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। রোপণের চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই ফলন আসে। তাছাড়া একই জমিতে অন্যান্য ফসল, রবিশস্য বা সবজি চাষেও কোনো সমস্যা হয় না। ফলে কৃষকরা একই জমি থেকে বহুমুখী আয় করতে পারছেন।
শুধু ফল নয়, সুপারি গাছের কাঠও গ্রামীণ জীবনে কাজে লাগে। বিশেষ করে ঘরের ছাউনি তৈরিতে এর কান্ডের ব্যবহার ব্যাপক। এ কারণে সুপারি গাছ গ্রামীণ অর্থনীতিতে দ্বিগুণ গুরুত্ব বহন করে।
তবে সুপারি নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভিন্ন মত রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত সুপারি সেবন মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এটি লিভার, কিডনি ও দাঁতের মাড়ির ক্ষতি করতে পারে। তবুও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণে পান-সুপারির ব্যবহার আজও কমেনি। দাওয়াত, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা অতিথি আপ্যায়নে পান-সুপারি এখনো অপরিহার্য অংশ।
সাতক্ষীরার অর্থনীতিতে সুপারির অবদান দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। বাণিজ্যিক চাষ ও বাজার সম্প্রসারণের ফলে অনেক মানুষ এখন এ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ অর্থনীতিতে সুপারি চাষ নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে, যা কৃষকের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে।