শহীদুল ইসলাম বাবর, সাতকানিয়া : ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল দশটা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আর্দশ মহিলা মাদ্রাসা মাঠে টাঙ্গানো রয়েছে সামিয়ানা। প্রাইমারী স্কুল ঘেষে তৈরি করা হয়েছে সু-সজ্জিত মঞ্চ। স্ক্র্যচে ভর দিয়ে একে একে মঞ্চে উঠলো চার যুবক। তাদের প্রত্যেকের একটি করে পা নেই। কারো ডান পা, আবার কারো বাম পা। তাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে মঞ্চে জায়গা করে দিচ্ছেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক এমপি ও চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী। এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত সহ¯্রাধিক মানুষের চোখ ভিজেছে পানিতে। মঞ্চে উঠা যুবকরা আর কেহ নয়, দীর্ঘ আওয়ামী দুঃশাসনের সময় সাতকানিয়াতে পুলিশের গুলীতে পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে এই যুবকরা। গত বৃহস্পতিবার সকালে শাহজাহান চৌধুরীর আয়োজনে মিথ্যা মামলার আসামী, কারা নির্যাতিত ও আহত ও পঙ্গু ভাইদের মিলন মেলায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান। শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাতকানিয়া পৌরসভার আমীর অধ্যক্ষ হামিদ উদ্দিন আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রধান বক্তা ছিলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের টীম সদস্য ও দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক জাফর সাদেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর এডভোকেট আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমীর পরিবেশ বিজ্ঞানী নজরুল ইসলাম, সেক্রেটারী অধ্যক্ষ নুরুল আমিন,এসিস্টেন্ট সেক্রটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইসহাক,

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শিবির সভাপতি আসিফুল্লাহ আরমান, লোহাগাড়া জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আসাদ উল্লাহ ইসলামাবাদী, সাতকানিয়ার আমীর মাওলানা কামাল উদ্দিন, সাবেক আমীর ডা. নুরুল হক, লোহাগাড়া জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আবুল কালাম, সাতকানিয়া জামায়াতের সেক্রেটারি তারেক হোসাইন ও গাজীপুর শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুকুল ইসলাম।

প্রধান অতিথি মাওলানা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এই সাতকানিয়া-লোহাগাড়া শহীদের রক্ত¯œাত ময়দান। এই ময়দান ইসলামের ময়দান। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা এই ময়দান আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল। তাদের ফ্যাসিস্ট শাসনে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের নির্যাতনে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে অনেক যুবক। অনেকেই হয়েছে ঘর ছাড়া। এখন ফ্যাসিস্ট নেই, তারা পালিয়ে গেছে। আগামীতে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে অবশ্যই আমাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। প্রধান বক্তার বক্তব্যে অধ্যাপক জাফর সাদেক বলেন, এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমাদের সাতকানিয়া-লোহাগাড়াসহ সারাদেশকে নরকে পরিণত করেছিল। তাদের অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ ভাবে জুলাই বিপ্লব সংগঠিত করে। এই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, এই জনপথ আমার অত্যান্ত প্রিয় জনপথ। আজকে এই আয়োজনে আমার প্রানের চেয়ে প্রিয় সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে কারা নির্যাতিত, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে আহত, পুলিশের গুলীতে আহত ও পঙ্গু প্রিয় ভাইয়েরা এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, মঞ্চে আছেন, পুলিশের গুলীতে পা হারানো আমার ভাই তাহের, কামাল রফিক ও হেলাল। তাদের এই ত্যাগের প্রতিদান আমরা দিতে পারবোনা। তাদের এই ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই জনপদে বুক ফুলিয়ে চলতে পারছি। আজকে আমরা সবাই আছি কিন্তু ,আমাদের প্রিয় ভাই হাকিম ও কামালসহ অনেকেই এখানে উপস্থিত নেই। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নির্মম ও নিষ্টুর ভাবে হাকিম ও কামালকে জবাই করে হত্যা করেছিল এই সাতকানিয়াতে। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্টরা পালিয়ে যাওয়ায় আমরা আবারো প্রিয় সাতকানিয়াসহ সারা দেশে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারছি। দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারছি। তিনি জামায়াত শিবির নেতাকর্মীদের উদ্যেশে বলেন, ফ্যাসিস্টদের সহযোগিতা করবেন না। তাদের সাথে আমাদের কোন সর্ম্পক নাই। যারা এই রকম করবে তারা গাদ্দার হিসেবে চিহ্নিত হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের সেই ষড়যন্ত্র সর্ম্পকে সজাগ থাকতে হবে। ভারতের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রম চলবেই চলবে ইনশাআল্লাহ। এসময় দক্ষিণ জেলা জামায়াতের এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ জাকারিয়া, সাতকানিয়া জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা আবুল ফয়েজ, লোহাগাড়া জামায়াতের সাবেক আমীর ও সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা মোহাম্মদ ইদ্রিস।