রেজাউল করিম রাসেল, কুমিল্লা অফিস : কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) এলাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে জনসংখ্যা ও নগরায়নের চাপ। বাড়ছে বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণও। অথচ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এখনও ডাস্টবিনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক বাসিন্দা ও দোকানদার ময়লা ফেলে দিচ্ছেন সড়কের পাশে, ড্রেনে বা খোলা জায়গায়। এতে করে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে।

সকালে কিংবা রাতে, কুমিল্লা নগরীর যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হাঁটলেই চোখে পড়ে ময়লার স্তুপ। কোথাও খাবারের পচা অবশিষ্টাংশ, কোথাও প্লাস্টিক বর্জ্য, আবার কোথাও স্যানিটারি প্যাড থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাসাবাড়ির গৃহস্থালি বর্জ্য। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কাছাকাছি কোনো ডাস্টবিন না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা ময়লা রাস্তায় ফেলছেন।

২০১১ সালে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন। যার আওতাভুক্ত এলাকায় প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিদিন প্রায় ২০০-২৫০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিন স্থাপনের পরিমাণ ও ব্যবস্থাপনা সেই অনুপাতে বাড়েনি।

সূত্রমতে, নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ৫০০টির বেশি ডাস্টবিন প্রয়োজন । বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন স্থানে মাত্র ১০০টির মতো স্থায়ী ও অস্থায়ী ডাস্টবিন রয়েছে। যেখানে অনেক জায়গায় ডাস্টবিনের সংখ্যা একেবারেই না থাকার কারণে মানুষ বিকল্পহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়্ ানগরীর সব ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকায় খোলা আকাশের নিচে। ফলে ময়লার গন্ধে ওই অঞ্চলের আশে পাশের মানুষ ভূগছেন নানা রোগবালাইয়ে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন সামাজিকভাবে। নগরবাসীর অভিযোগ সিটি কর্পোরেশন হওয়ার এক যুগ পার হলেও গড়ে উঠেনি আধুনিক কোন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

নগরীর টমচমব্রীজ ,ইুপজেড রোড, মনোহরপুর সংরাইশ, সুজানগর, চকবাজার, তেলিকোনা, কাটাবিল, হযরতপাড়া, নূরপুর, রেইসকোর্স, চৌধুরীপাড়া, ঝাউতলা, কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, শাসনগাছা, চকবাজার, চর্থা, পদুয়ারবাজার বিশ্বরোডসহ প্রায় প্রতিটি এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়। বিশেষ করে দোকানপাট বন্ধ হওয়ার পর রাতে অনেক ব্যবসায়ী সড়কের পাশে ময়লা ফেলে যান। এছাড়া প্রতিটি পাড়া মহল্লায় বাসিন্দারা ডাস্টবিন সংকটের কারনে ময়লা আবর্জনা ফেলছেন সড়কের পাশে।

নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও সুজানগর কবরস্থান উন্নয়ন কমিটির সাধারন সম্পাদক মোঃ সোহাগ বলেন, আমাদের এলাকায় কোন ডাস্টবিন নেই। মানুষ বাধ্য হয়ে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলছে। এ এলাকার কবরস্থানের দেওয়ালের ভিতরে ময়লা ফেলতে ফেলতে বিশাল স্তুপ করে ফেলেছে। এখন ময়লা সড়কের উপর এসে পড়ছে। বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনে জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছেনা।

নগরীর কাশারীপট্রি এলাকার বাসিন্দা নাসরিন আক্তার বলেন, আমাদের এলাকায় কোনো নির্দিষ্ট ডাস্টবিন নেই। সকালে দেখি রাস্তার পাশে আবর্জনার বিশাল স্তুপ। দুর্গন্ধে হাঁটাও যায় না।

একই অভিযোগ জানান চর্থা এলাকার বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইপিজেড সড়কের দেয়ালের ঘেষে এক সময় ফুলের বাগান ছিলো, এখন সেই বাগানে ময়লা ফেলছে, সেসব ময়লা প্রা সড়কে এসে পড়েছে। ময়লা রাখার জায়গা না থাকায় সবাই যেখানে- সেখানে ফেলে। এতে পরিবেশ যেমন নোংরা হয়, তেমনি শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের এক শিক্ষার্থী নুসাইবা তাবাসুম বলেন, সকালে ক্লাসে যাওয়ার সময় রাস্তায় দুর্গন্ধে নাক চেপে চলতে হয়। আধুনিক সিটি কর্পোরেশন হলেও ডাস্টবিন সংকট সত্যিই লজ্জাজনক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, নতুন ওয়ার্ড সংযুক্ত হওয়ায় চাহিদার তুলনায় ডাস্টবিনের সংখ্যা কম। আমরা ডাস্টবিন স্থাপনের জন্য জায়গা পাচ্ছিনা। স্থান নির্ধারন করার জটিলতা রয়েছে। আমাদের ১০০টি ডাস্টবিন রয়েছে। আরো নতুন করে ১২০টি ডাস্টবিনের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। সহসাই এগুলোর কাজ হবে।

ডাস্টবিন সংকট ও অব্যবস্থাপনার ফলে শহরের নালা-নর্দমায় জমে থাকা ময়লা বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নগরীর বেশিরভাগ ড্রেন এখন পলিথিন, প্লাস্টিক ও গৃহস্থালি বর্জ্যে প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।

এ বিষয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জন রেজা মোঃ সারোয়ার আকবর বলেন, ময়লা সঠিকভাবে নিষ্পত্তি না হলে তা থেকে নানা ধরনের রোগ ছড়াতে পারে। যেমন, পানি জমে থাকলে ডেঙ্গু, এছাড়া টাইফয়েড, হেপাটাইটিসসহ পানিবাহিত নানা রোগ। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ডাস্টবিন বসানোর পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরী ।

এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মামুন দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, সবাই ডাস্টবিন চায়, কিন্তু বাড়ির পাশে কেউ জায়গা দিচ্ছেনা। জায়গার অভাবে আমরা স্থায়ী ডাস্টবিন করতে পারছিনা। ফলে আমরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে ২০০ প্লাষ্ট্রিকের ডাস্টবিন দিয়েছি। আরো ৫০০টি দেওয়া হবে। এছাড়া আমাদের জগন্নাথপুরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। এটি হলে সহসাই কাজ শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা অনুরোধ করছি, সবাই যেন নির্ধারিত স্থানে ময়লা ফেলেন এবং পরিচ্ছন্ন নগর গঠনে কুসিককে সহায়তা করেন।