কুষ্টিয়ায় সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে ২১৩ ইটভাটা। এসব ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্রও নেই। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ ভাটা চলছে প্রতিবছর। লোকালয় ও কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোতে প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে পরিবেশ, জনজীবন ও কৃষিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ছয় উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ২১৩টি। এর মধ্যে বৈধ ছাড়পত্র নিয়ে চলছে মাত্র ১৭টি। ১৯৬টি চলছে পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্সবিহীন। বৈধ ইটভাটর মধ্যে ভেড়ামারা উপজেলায় ৩টি, দৌলতপুরে ১টি, কুমারখালী উপজেলায় ৯টি এবং খোকসা উপজেলায় ৪টি রয়েছে। যার মধ্যে ২টি অটো ব্রিকস এবং বাকী ১৫টি জিগ-জ্যাগ।
কুষ্টিয়া সদর এবং মিরপুর উপজেলায় নেই কোন বৈধ ইটভাটা। অবৈধ ১৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ১টি অটো, ৪২টি জিগ-জ্যাগ, ২৯টি ড্রাম চিমনি এবং ১২৪টি উচ্চতার পাকা ফিক্সড্ চিমনি। এদিকে অবৈধ ১৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ২১টি ইটভাটার মালিক হাইকোর্টে রিট করার কারণে রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর এসকল ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে না বলে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে।
সরকারি আইনে কৃষি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কমপক্ষে প্রতিটি ইটভাটার জন্য তিন-চার একর কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন করেছে প্রভাবশালীরা। আইনের ফাঁক-ফোকর ডিঙিয়ে জেলার এসব অবৈধ প্রতি বছরের মতো এবারও চলতি মৌসুমের শুরুতেই কৃষিজমি ও নদীর পলি মাটি কেটে প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন ইট। এতে কৃষিজমি হ্রাস ও খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা এলাকার কৃষকরা জানান, ইটভাটার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষিজমি। দেদারছে কাঠ পুড়িয়ে উজাড় করা হচ্ছে ফলদ-বনজ সম্পদ। ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া-ছাই ফসলের ক্ষতি, পরিবেশ দূষণসহ জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
একজন ভাটামালিক বলেন, ইটভাটা মালিক সমিতির শক্তিশালী সিন্ডিকেটের প্রভাব, অর্থবিত্ত ও তদবিরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা অবৈধ ভাটা উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। এছাড়া কতিপয় ভাটা মালিক উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়ে সৃষ্টি করেছে আইনি প্রতিবন্ধকতা। প্রতি বছর কিছু সংখ্যক ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরবর্তী সময়ে অদৃশ্য কারণে তা আর এগোয়না বেশি দূর।
কুষ্টিয়া ইটভাটা মালিক সমিতি একাংশের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলী বলেন, আমাদের নিয়ন্ত্রণে ৭৩ ইটভাটা রয়েছে। ৮ থেকে ৯টা বাদে সবাই কয়লা ব্যবহার করেন। পরিবেশের ছাড়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, বাংলাদেশের কারো পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। যদি তাই হয় তাহলে সবাই অবৈধ। আমরা নিয়মিত সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমল থেকেই বন্ধ রয়েছে।
কুষ্টিয়ার পরিবেশ অধিদপ্তর উপপরিচালক মো. ইমদাদুল হক বলেন, অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোতেও অভিযান চালানো হবে। তবে এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্যে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পর্যায়ক্রমে সকল ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি উপজেলার চরসাদীপুরে ভাটা উচ্ছেদে অভিযান করো হয়েছে। নষ্ট করা হয়েছে ইট ও চিমনী। বর্তমানে জেলার ভাটা মালিকরা অভিযানের ভয়ে আতংকে রয়েছে। অনেকেই নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা অব্যহত রেখেছে।