মাহমুদ শরীফ, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা : কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চর সাদীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পদ্মা নদীর দুূর্গম চর অঞ্চলে অবস্থিত শিক্ষার আলো ছড়ানো একমাত্র বিদ্যাপীঠ। মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়টি পদ্মা নদী বিধৌত চর সাদীপুর অঞ্চলে অবস্থিত। এ অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া করার একমাত্র বিদ্যাপীঠ এটি।
পদ্মা পাড়ের সাদীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৯৯ সালে সরকারের এমপিওভুক্ত হয়েছে। ২০০২ সাল থেকে এসএসসি পরীক্ষার অনুমতি পায় এই প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৩৫০ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল অত্যন্ত সন্তোষজনক।
সাদীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি কুমারখালী উপজেলা সদর থেকে ১৮কিলোমিটার এবং কুষ্টিয়া জেলা সদর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মাঝখানে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রমত্তা পদ্মা নদী রয়েছে। পদ্মা নদী দ্বারা বিভক্ত পাবনা পাড়ে চর অঞ্চলে অবস্থিত বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পাবলিক পরীক্ষা ক্ষেত্রে পদ্মা নদী পার হয়ে কুমারখালীর চড়াইকোল-৪৯৮ কেন্দ্রে অংশ গ্রহণ করতে হয়। পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গি। এই দুর্ভোগ লাঘবে কেন্দ্র পরিবর্তনের দাবি উঠেছে জোরালোভাবে।
শিক্ষক ও অবিভাবকরা জানান, সাদীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না বিধায় পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে বাড়ি ভাড়া করে থাকতে হয়, যা একদিকে ব্যয়বহুল ও বিরাট ঝুঁকিপূর্ণ। এই এলাকার অধিকাংশ বসবাসকারী মানুষ কৃষক, শ্রমিক ও নি¤œ মধ্যবিত্ত। এসময় কোমলমতি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দের পরীক্ষাকালীন সময়ে দারূণ শংকার মধ্যে দিন কাটে। ইতিপূর্বে কয়েকবার বখাটে ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা সৃষ্ট পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছে। এ পরিস্থিতির কারণে অভিভাবকগণ ৭ম শ্রেণি পাস করলেই তাদের ছেলেমেয়েদের এই বিদ্যালয়ে রাখতে নারাজ।
জানা গেছে, কেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য ইতিমধ্যেই ম্যানেজিং কমিটির শুপারিশের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদর উদ্দিন সচিব শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহাপরিচালক,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড ঢাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর, জেলা প্রশাসক কুষ্টিয়া, জেলা শিক্ষা অফিসার কুষ্টিয়া, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কুমারখালী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কুমারখালী বরাবর আবেদন করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরো জানান, আমাদের বিদ্যালয় থেকে পাবনা জেলা সদর মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো। মাত্র ২০-২৫ মিনিটে অটোরিক্সা, সিএনজি ও বাইসাইকেলযোগে জেলা সদরে পৌঁছানো যায়। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করার জন্য শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র পাবলিক পরীক্ষাসমূহের কেন্দ্র যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে পরিবর্তন করে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পাবনা শহর কেন্দ্রে নেওয়ার জোর দাবি উঠেছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই প্রতিবেদককে জানান, এসএসসি পরীক্ষার সময় আমাদের কষ্ট আর দুর্ভোগের শেষ থাকে না। আমরা পদ্মা পাড়ি দিয়ে কুমারখালী কেন্দ্রে আসি ঝুঁকি নিয়ে। আমরা এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র কুমারখালী থেকে পরিবর্তন করে রাজশাহী বোর্ডের অধীনে পাবনা শহরে স্থানান্তরের জোর দাবি করছি।