সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহীতে অবৈধভাবে চলছে পুকুর খনন। সংশ্লিষ্টদেরকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে একটি মহল এই পুকুর খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এরকম একটি দৃশ্য দেখা যায় পবা উপজেলায়- বড়গাছি বাজার সংলগ্ন ১৬ বিঘার তিন ফসলি জমিতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পুকুর খনন করছে। অন্যদিকে, পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের রাতুয়াল বিলে প্রকাশ্যে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এছাড়াও একই বিলে অবৈধভাবে আরেক পুকুর খনন করার কাজ চলছে। এভাবেই রাজশাহীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ‘পুকুর খনন সন্ত্রাসীরা’। রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে কৃষকের জমি নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। ফলে জেলাজুড়ে উজাড় হচ্ছে তিন ফসলি উর্বর কৃষিজমি। এমনকি ফলের বাগান কেটেও চলছে মৎস্য চাষের লক্ষ্যে পুকুর খনন।

কৃষি দপ্তরের তথ্য মতে, গত দেড় দশকে রাজশাহী জেলায় ৪০ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমেছে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে কৃষিজমিতে সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ কারণে দেশের শস্যভা-ারখ্যাত রাজশাহীতে কমছে ফসল, সবজি ও ফল উৎপাদন। কৃষিজমি কমার কারণে সচ্ছল কৃষক ক্রমাগত আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাবের শঙ্কাও। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্যমতে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে রাজশাহীতে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৮০ হেক্টর। ২০২৪ সালে আবাদযোগ্য জমি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৫৮ হেক্টর। অর্থাৎ ১৭ বছরে রাজশাহী জেলায় আবাদযোগ্য জমি কমেছে ৩৬ হাজার ২২ হেক্টর। ২০২৫ সালে এসে সেটি ৪০ হাজার হেক্টর হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। কৃষি জমির শ্রেণি বদল করে পুকুর খনন পুরোপুরি বেআইনি। কিন্তু সুযোগ সন্ধানীরা অত্যন্ত কৌশলী। তারা পুকুর খনন করছেই। ফলে রাজশাহীতে কৃষি জমি কমছে। কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফসল, সজবি ও ফল উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতি উত্তরণে জরুরি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।