ব্রিটিশ ভারতের পর পাকিস্তান আমল পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের সময় কালও ৫৪ বছর পেরিছে। প্রযুক্তির কল্যাণে পরিস্থিতি এখন অনেক পাল্টে গেছে। রাতে এখন রানারের ঘণ্টা শোনা যায় না। মোবাইল ফোনের টুংটাং শব্দ সব সময় বেজেই চলেছে। তথ্য প্রযুক্তির দাপটেই মিলিয়ে গেছে পোস্ট অফিসের পথচলা।
স্বাধীনতার পর দেশ-বিদেশে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল ডাক বিভাগ। নব্বইয়ের দশকেও ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ডাকঘরই ছিল ভরসা। এর পর থেকে তথ্য প্রযুক্তি প্রসারের কারণে ব্যক্তিগত চিঠিপত্র আদান-প্রাদানের ঐতিহ্য গতি হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। প্রযুক্তির প্রসারের এই ধাক্কা বিশ্বের সব দেশেই ডাক বিভাগের ওপর পড়েছে।
অতীত ে ঘটে দেখা যায়, ডাক বিভাগ একটি পুরোনো সরকারি পরিষেবা প্রতিষ্ঠান। এর শুরু ব্রিটিশ আমলে, ১৭৬৬ সালে। ডাক অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথম ডাক পরিবহন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়। ১৭৭৪ সালে কলকাতা ও ঢাকার (পূর্ববঙ্গ) মধ্যে ডাক সেবা সরকারিভাবে চালু হয়। ডাক টিকিটের প্রচলন হয় ১৮৫৪ সালে। বাংলাদেশে ডাকঘর স্থাপিত হয় ১৮৭৩ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) পাকিস্তান ডাক বিভাগের অধীনে পরিচালিত হতে থাকে এই ডাক বিভাগ। স্বাধীনতার পর ডাক বিভাগ স্বতন্ত্রভাবে গঠিত হয়ে কাজ শুরু করে।
ডাকসেবার সূচনাকালের ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, সে সময় দ্রুত চলার জন্য ঘোড়া ছিল প্রধান বাহন। ডাকসেবায় ঘোড়ার ব্যবহারও হতো। পায়ে হাঁটার ব্যবস্থা তথা ‘রানার’ ছাড়া দ্রুত বার্তা পৌঁছাতে ব্যবহার হয়েছে দ্বিচক্র যান বাইসাইকেল। এরপর থেমে থাকা। দ্রুত যোগাযোগে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে ডাকবিভাগ থেকে সরে গেছে। অস্তাচলে গেলেও এর প্রতি অনেকের আস্থা এখনো আছে।
সারা দেশের ন্যায় খুলনায়ও তথ্যপ্রযুক্তির স্মার্ট যুগের দাপটে ডাক বিভাগের কর্মকান্ড ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসছে। হারিয়ে যাচ্ছে হাতের লেখা খাম, ডাকটিকিটের ঘ্রান, পোস্টকার্ডের আবেগ। পত্রমিতালী, চিঠি, ডাকপিয়ন, পোস্টকার্ড-এসব কেবল বাহক নয়, বরং সম্পর্ক; অপেক্ষা আর সময়ের ধারক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে।
সমাজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাক বিভাগের অব্যবস্থাপনা, দীর্ঘসূত্রতা ও ডিজিটাল বিকল্পের অভাববোধে এমনটি হয়েছে। মানুষ এখন মোবাইল, ইমেইল, কুরিয়ার সার্ভিস কিংবা হোয়াটসঅ্যাপেই যোগাযোগ সারছে। অথচ আগে ছিল একটাই ঠিকানা পোস্ট অফিস ।
উন্নত দেশগুলো কীভাবে ডাক বিভাগকে কার্যকর রেখেছে, এ বিষয়ে গবেষণার তাগাদা দিয়ে একজন প্রযুক্তি বিশেজ্ঞ বলেন, সেই আইডিয়াগুলো যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে ভালো হবে। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে মানুষ হয়তো আর আগের ধারায় ফিরে যাবে না। কিন্তু আমরা চাইলে যে সম্পদগুলো আমাদের আছে তাকে কীভাবে কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে পারি।