আজাদুর রহমান আজাদ মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী কালার বাজর সংলগ্ন নলু নদের উপরে ৪ কোটি ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এলজিইডির নির্মিত সেতু এখন জনগণের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের টেক্সের টাকা যেন পানিতেই নিক্ষেপ করা হল। সেতুটি নিচু করে তৈরি করায় বর্ষা মৌসুমে সেতুর নিচ দিয়ে কৃষিপণ্য বাহী নৌকা, ট্রলার, বালুবাহি নৌকা ও মৎস্যজীবীদের নৌকা চলাচল করতে পারে না। যার ফলে সেতুটি এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা, বালু ব্যবসায়ী, কৃষক ও জেলেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জানাযায় মৌলভীবাজার এলজিইডি’র অধিনে ৪৬ মিটার দৈর্ঘ্য আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, সংযোগ সড়ক ও ছোট কালভার্ট নির্মাণ করতে ২০২০ সালে ‘ভেরিয়েশন কন্ট্রাক্ট’ মূল্য ধরা হয়েছে ৪ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার ৩শ ৬৫ টাকা। কাজটি ২০২১ সালের ৮ মার্চ শেষ হবার কথা থাকলেও পুনঃসংশোধন করে মেয়াদ বাড়িয়ে সমাপ্তির তারিখ দেয়া হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। অতিরিক্ত প্রায় আড়াই বছর চলে গিয়ে মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও নতুন কালভার্ট ও সংযোগ সড়কের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। শেরপুর জেলার ধ্রুব মোশারফ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যা কবলিত এলাকায় নির্মিত মূল সেতুটি তুলনামূলকভাবে পিলার বসিয়ে অনেক নিচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কাঁচা সংযোগ সড়কে নিচু করে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। চলছে কালভার্ট নির্মাণের কাজও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক শিক্ষক বলেন, তৎকালীন আ’লীগ সরকারের আমলে তৈরি এ সেতুটি নির্মাণ করার সময় স্থানীয় আ’লীগ নেতারা ও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৗশলী মিলে সেতুর টাকা হরিলুট করে খেয়েছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উজানের পাহাড়ি বালুমহাল থেকে বালু ভর্তি নৌকা নিয়ে মাঝিরা এই নদ দিয়ে কুশিয়ারা নদীতে বের হয়ে সিলেটের বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকায় বালু বিক্রি করতেন। বর্ষায় কৃষকরা বোরো ধান বোঝাইসহও জেলেরা নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতেন। নিচু করে সেতু নির্মাণ করায় ৩ বছর ধরে এ পথে নৌকা আসা যাওয়া করতে পারে না। আমরা সোস্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করেছি। কে শুনে কার কথা। প্রতিবাদে কোন কাজ হয়নি। চান্দভাগ হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষক মাওঃ তাহেদ আহমদ বলেন, এই এলাকায় বেশিরভাগ দরিদ্র মৎস্যজীবি পরিবার রয়েছে। তারা বর্ষা মৌসুমে ঐ নদ দিয়ে মাছ ধরে থাকেন। সেতু নিচু করে নির্মাণ করায় তাদের যাওয়া আসা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। স্থানীয় বকশিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের ডাক্তার মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, এই সেতুটি মানুষের যাতায়াতের সুবিধা ও নিচ দিয়ে যাতে নৌকা যায় এর আলোকে নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু এখন আমরা দেখছি অনেক নিচু করে সেতু নির্মিত হয়েছে। বর্ষাকালে সেতুর নিচ দিয়ে ছোট ট্রলার চলাচল করলে দুর্ঘটনার শিকার হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ধ্রুব মোশারফ (জেবি) এর মুঠোফোনে আলাপচারিতায় প্রতিষ্ঠানের এক সহযোগী জানান, প্রকৌশলী যেভাবে ডিজাইন ব্যবস্থা করেছেন, আমরা সেভাবেই কাজ করেছি। নলু সেতুটি কেন নিচু করে নির্মাণ করা হলো এবং আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী এমনটি জানতে চাইলে মৌলভীবাজার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ সত্য নয়। আর সেতু ডিজাইন মতই হয়েছে।
গ্রাম-গঞ্জ-শহর
রাজনগরে ৪ কোটি টাকার সেতু জনগণের গলার ফাঁস
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী কালার বাজর সংলগ্ন নলু নদের উপরে ৪ কোটি ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এলজিইডির নির্মিত সেতু এখন জনগণের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের টেক্সের টাকা যেন পানিতেই নিক্ষেপ করা হল।