মোঃ লাভলু শেখ, লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে দেশীয় মাছের সংকট নদী-নালা ও জলাশয়ে দেশীয় মাছের প্রজনন হ্রাস পেতে শুরু করেছে। যা জেলার খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। “মাছে-ভাতে বাঙালি” প্রবাদে বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে মাছের গুরুত্ব অমোঘ। তবে লালমনিরহাট জেলার নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ে এখন দেশীয় মাছের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলাজুড়ে তিস্তা, ধরলা, রতনাই, স্বর্ণামতী, সানিয়াজানসহ বহু নদী প্রবাহিত। চেনাকাটা, টেংরামারী, সতীনদী ও অন্যান্য খাল-বিলও এ অঞ্চলের প্রাণস্রোত। এ জলাশয়গুলোতে মাগুর, শিং, বাইন, বৈরালী, বুড়াল, বালিয়া, গজার, খলিসা, পুঁটি, কৈ, শোল, বোয়াল, সরপুঁটি, শাল, ওপর চকুয়া, চোপড়া, চান্দা, খরকাটি, চেং, টাকি, মলা, ঢেলা, চিংড়ি, টেংরা, গতা, পোয়া, কানি পাবদা, বাঘা আইড়, খৈলসা, গাং মাগুর, গুঁজি আইড়, পাবদা, রুই, কাতল, মৃগেল, চিতল, বাতাসি, বউরাণী, তারাবাইন ও কালোবাউশসহ নানা দেশীয় মাছের প্রজনন হ্রাস পাচ্ছে। লালমনিরহাটের হাট-বাজারে এখন বড় মাছ সহজে পাওয়া গেলেও ছোট দেশীয় মাছ খুবই দুর্লভ। মাছ ব্যবসায়ী লিটন মিয়া, আব্দুস সালাম ও আতাউর ইসলাম সাংবাদিকদের অভিযোগ করেছেন, ছোট মাছ এখন বাজারে খুব কম। যে পরিমাণ আসে তার দামও বেড়ে গেছে। পূর্বে জলাশয় ইজারা নিয়ে দেশীয় মাছ চাষ করা হতো। কিন্তু এখন ধনী ব্যবসায়ীরা হাইব্রিড মাছ চাষে ঝুঁকছেন। যা প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বড়বাড়ী বাজারের আড়ত মালিক পলাশ রায় বলেন, “এত নদী-নালা থাকা সত্ত্বেও ছোট মাছ দুর্লভ। চাহিদা আছে প্রচুর। কিন্তু সরবরাহ নেই। মাছ ক্রেতা জাহিদ হাসান জানান, বাচ্চারা ছোট মাছ খেতে চায়। কিন্তু পুঁটি ও টাকি ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। এটি হতাশাজনক।
জেলার জেলে আফজাল আলী ও নজরুল ইসলাম বলেন, “এক যুগ আগে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ সহজলভ্য ছিল। এখন জাল ফেললেও আগের মতো মাছ মেলে না। জীবিকা চালানোর জন্য পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছি।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর জেলা সংবাদদাতা বিপুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমি জেলার হাট-বাজারে ছোট মাছের খোঁজে ঘুরেছি। কোথাও উল্লেখযোগ্য দেশীয় মাছ পাওয়া যায়নি। যদি এই অবস্থা চলতে থাকে। একদিন দেশীয় মাছ বিলীন হয়ে যাবে। সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সারোয়ার জামান বলেন, “দেশীয় মাছ রক্ষায় হাট-বাজারে অভিযান চালিয়ে চায়না-দুয়ারী ও কারেন্ট জাল ধ্বংস করা হচ্ছে। জলাশয়ে ডিমওয়ালা মাছ অবমুক্ত। জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রশিক্ষণ ও বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হলে দেশীয় মাছ রক্ষা সম্ভব।
স্থানীয়রা সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন, যাতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী দেশীয় মাছ সংরক্ষণ করা যায়।