নতুন কিশোরকণ্ঠের আয়োজনে গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে কিশোরকণ্ঠ জাতীয় পাঠ প্রতিযোগিতা ২০২৪-এর বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। কিশোরকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক কবি মোশাররফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কালজয়ী সাহিত্য সাইমুম সিরিজের লেখক ও দৈনিক সংগ্রামের প্রকাশক আবুল আসাদ। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরকণ্ঠ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নর্দান বিশ^বিদ্যালয় বাংলাদেশের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল আসাদ বলেন, তরুণরাই একটি সমাজ পরিবর্তন করতে পারে। একটি সফল বিপ্লব করতে পারে তারাই। আমাদের চব্বিশের গণঅভুত্থানে আমরা এটাই দেখেছি। তরুণদের কাছে আমরা বড়োরা পরাজিত হয়েছি। আমাদের না পারা কাজটি করে দেখিয়েছে তরুণরা। কিশোর-তরুণদের সম্মান ও মর্যাদা অনেক বেশি। পৃথিবীতে বস্তুগত উন্নতি অনেক হয়েছে। তবে হয়নি মানবকি বিকাশ। আজকের তরুণরাই আগামীতে বিশ^কে নেতৃত্ব দেবে। তাই একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্য তাদের অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে। আজকের বিজয়ী ও নতুন কিশোরকণ্ঠের পাঠকদের প্রতি আমার সেই আহ্বানই থাকবে। বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব তারিক হাসিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, নতুন কিশোরকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ নাঈম। এ সময় তিনি বলেন, আজকের পৃথিবী নৈতিক উন্নতির চরম শিখড়ে পৌঁছাতে পারেনি। আমরা যাদের উন্নত দেশ বলে জানি, আজকে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে সেসব উন্নত দেশগুলোতেই। সমাজের রন্ধে রন্ধে ছড়িয়ে পড়েছে নানা অনাচার। তারা তাদের তথাকথিত সেই নৈতিকতা বিতরণ করছে আমাদের মতো দেশগুলোতে। যে নৈতিকতা ফিলিস্তিনে গণহত্যার ব্যাপারে কথা বলে না। কিশোরকণ্ঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে। কিশোরকণ্ঠ একটি নৈতিকতা সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে চায়। শিশু-কিশোররাই আগামীর ভবিষ্যৎ। তাদের মেধা বিকশিত করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে চায় কিশোরকণ্ঠ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, সমাজের সর্বস্তরের দুর্নীতি, ঘুষকে মেনে নেওয়ার যে টেনডেনসি গড়ে উঠেছে, আমাদের তরুণ প্রজন্ম তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নতুন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়েছে। কিশোরকণ্ঠের পাঠকদের সবচেয়ে বড়ো দায়িত্ব হলো, তার আশেপাশে যদি কেউ অন্যায় করে তবে সেটার প্রতিবাদ করা। এমন একটি প্রজন্ম তৈরির জন্যই তো কাজ করছে নতুন কিশোরকণ্ঠ।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে জাহিদুল ইসলাম বলেন, সুস্থ ধারার জ্ঞান চর্চার জন্য কিশোরকণ্ঠ তার অসাধারণ আয়োজন অব্যাহত রেখেছে। স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিশোরকণ্ঠ পাঠক ফোরামের মাধ্যমে আমরা সাহিত্য আড্ডা ও বিভিন্ন সৃজনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক আয়োজন করে থাকি। শিশু-কিশোরদের মেধা বিকাশ ও সমৃদ্ধ করার জন্য কিশোরকণ্ঠ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বর্তমানে অনেকগুলো সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড়ো সংকট পাঠের সংকট। যারা সৎ মানুষ তারা যদি জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে পিছিয়ে থাকে তবে সেই খালি জায়গা নিঃসন্দেহে খালি থাকবে নাÑঅন্য কেউ পূরণ করবে। দু প্রকার জ্ঞান আছে। উপকারী এবং অপকারী। আমরা উপকারী জ্ঞান অর্জনের কথা বলছি। জ্ঞান ও নৈতিকতার সমন্বয়ে একটি সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে উঠলেই একটি সমৃদ্ধ দেশ আমরা দেখতে পাব।
সভাপতির বক্তব্যে কবি মোশাররফ হোসেন খান বলেন, কিশোরকণ্ঠ চায় লেখক তৈরি করতে। কিশোরকণ্ঠ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করছে। কিশোরকণ্ঠ হলো সার্বজনীন পত্রিকা। কিশোরকণ্ঠ চায় মেধাকে মূল্যায়ন করতে। উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, নতুন কিশোরকণ্ঠের সহকারী সম্পাদক খন্দকার নূর হোসাইন, কিশোরকণ্ঠ ফাউন্ডেশনের এডমিন ম্যানেজার ছাইদুল্লাহ সরদার, কিশোরকণ্ঠ পরিবারের সদস্য আবদুল হামিদ, নাহিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম, ফোরকান উদ্দিন ফয়সাল, আশিকুর রহমান নয়ন, তরিকুল ইসলাম শেখ, আনিসুর রহমান, আতিকুর রহমানসহ বিজয়ী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ। উল্লেখ্য এবারের প্রতিযোগিতা দু’টি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। ১ম পর্ব শাখা পর্যায়ে এবং ২য় পর্ব জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়। মে, জুন এবং জুলাই মাসের নতুন কিশোরকণ্ঠের ওপর অনুষ্ঠিত ১ম পর্বের উন্মুক্ত কুইজ প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে তিন লক্ষ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্য থেকে শাখা পর্যায়ের বাছাই শেষে দেশব্যাপী ১৩৮টি সেন্টারে একযোগে ১,৩৮০ (প্রায়) জনকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা ২২ নভেম্বর ২০২৪ সকাল ১০:০০টায় অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় পর্বের প্রতিযোগিতা শেষে ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ বিকেল ৩.০০টায় পত্রিকা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ের ২০ জন বিজয়ীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দেশব্যাপী জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে মোট ২৫ লক্ষ টাকার শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। জাতীয় পর্যায়ে প্রথম পুরস্কার ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার টাকা), দ্বিতীয় পুরস্কার ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার টাকা), তৃতীয় পুরস্কার ২০,০০০/- (বিশ হাজার টাকা), ৪র্থ পুরস্কার ১৫,০০০/- (পনেরো হাজার টাকা), ৫ম পুরস্কার ১০,০০০/- (দশ হাজার টাকা), ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম পর্যন্ত ৭,০০০/- (সাত হাজার টাকা) এবং ১১তম থেকে ২০তম পর্যন্ত ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার টাকা) সনদ, ক্রেস্ট ও মূল্যবান বই প্রদান করা হয়। জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার বিজয়ী যারা: ১ম স্থান : মো. আব্দুল লাবীব আল মাশরাফি, নবম শ্রেণি, জলঢাকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সদর, নীলফামারী। ২য় স্থান : মো: মেহেদী হাসান, নবম শ্রেণি, কাহারোল উচ্চ বিদ্যালয়, কাহারোল, দিনাজপুর। ৩য় স্থান : এস এম আরিফ মাহমুদ, নবম শ্রেণি, রাজনগর মুহাম্মদীয়া আলিয়া মাদ্রাসা, রাজনগর, মৌলভীবাজার। ৪র্থ স্থান : হাসিব উল্লাহ, নবম শ্রেণি, সোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা।
৫ম স্থান : রাকিবুল হাসান রবিন, অষ্টম শ্রেণি, আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সদর, নেত্রকোনা, ৬ষ্ঠ স্থান : সাদ ইবনে ইয়াছির, দশম শ্রেণি, আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মদন, নেত্রকোনা, ৭ম স্থান : আলীমূল ইসলাম, নবম শ্রেণি, আদর্শ স্কুল নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ, ৮ম স্থান : সিদ্দিকুর রহমান, দশম শ্রেণি, লাকসাম উম্মুল ক্বোরা দাখিল মাদ্রাসা, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা, ৯ম স্থান : মোহা: আমিরুল ইসলাম, দশম শ্রেণি, রেজিয়্যান্ট স্কুল এন্ড কলেজ, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ১০ম স্থান : মোঃ সাগর সেখ, একাদশ শ্রেণি, কুমারখালী সরকারি কলেজ, কুমারখালি, কুষ্টিয়া, ১১ম স্থান : মোছা: আমিনা আক্তার হিরা মনি, একাদশ শ্রেণি, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ, সদর, গাইবান্ধা, ১২ম স্থান : মৌন ইবনে মুরাদ বিবেক, অষ্টম শ্রেণি, নেত্রকোণা কালেক্টরেট স্কুল, সদর, নেত্রকোনা, ১৩ম স্থান : গাজী মুসাররাত সিনিন, নবম শ্রেণি, দি বাডস্ রেসিডেনসিয়্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার। ১৪ম স্থান : আয়শা সিদ্দিকা, আলিম ২য় বর্ষ, পায়রা ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসা, ফুলতলা, খুলনা। ১৫ম স্থান : বর্ষন শিকদার, একাদশ, ঝিনাইদহ কেশব চন্দ্র কলেজ, সদর, ঝিনাইদহ, ১৬ম স্থান : রাজিব আহসান রাজু, একাদশ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, ঢাকা, ১৭ম স্থান : মো: তামিম, নাহবেমীর শ্রেণি, টাঙ্গাইল জামিয়া ইসলামিয়া আশরাফুল, সদর, টাঙ্গাইল, ১৮ম স্থান : মোঃ তাওফিকুর রহমান, আলিম, ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা, সদর, ঝিনাইদহ, ১৯ম স্থান : মোঃ মাসুম বিল্লাহ তাসীন, সপ্তম শ্রেণি, বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা, হালিশহর, চট্টগ্রাম, ২০ম স্থান : মোঃ নাহিদুল ইসলাম, ১ম সেমিস্টার, রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।