গেল বছরের ১৫ অক্টোবর ‘যমুনা অয়েলের কর্মকর্তা জাহিদের বিরুদ্ধে তেল বিক্রিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রামে প্রকাশিত সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে যমুনা অয়েল প্রধান কার্যালয়ের অ্যাসিন্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এসএন্ডডি) এ কে এম জাহিদ সারওয়ারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘ প্রায় একবছর পর তার বিরুদ্ধে করা সেই রিপোর্টের সত্যতা পায় যমুনা কতৃপক্ষ। তারই অংশ হিসেবে গত ৯ অক্টোবর জাহিদ সারওয়ারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একইসাথে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও প্রদান করা হয়।

যমুনা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তফা কুদরুত-ই ইলাহী সাক্ষরিত সাময়িক বরখাস্তকরণ (স্মারক নং: ২৮.২৪.০০০০.০০৫.২৭.০০১.২৫.২৯০) পত্রে বলা হয়, আপনি কোম্পানীর মোংলা অয়েল ইনস্টলেশনে (০৬-০৬-২০২১ থেকে ১২-০৯-২০২৪ তারিখ পর্যন্ত) দায়িত্বে নিয়োজিত থাকাকালে মোংলা অয়েল ইনস্টলেশনের ২০২৪ সালের জুন মাসের ০১ নং ট্যাংকের টিএসএলআর এ ১,২৬,৪০০ লিটার ডিজেল বিক্রয় দেখিয়ে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ১ম সপ্তাহে প্রধান কার্যালয়ে তথ্য প্রেরণ করেন। কিন্তু প্রধান কার্যালয়ের হিসাব বিভাগ কর্তৃক উক্ত ১,২৬,৪০০ লিটার ডিজেল বিক্রয়ের বিপরীতে ৯৯,০০০ লিটারের চালান পাওয়ায় অর্থাৎ ২৭,৪০০ লিটার ডিজেলের চালান না পাওয়ায় টেলিফোনে তৎকালীন ডিপোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আপনাকে বিষয়টি জানান হলে আপনি আহস্ট ২০২৪ এর শেষ সপ্তাহে উক্ত টিএসএলআর সংশোধন করে ১,২৬,৪০০ লিটার ডিজেল বিক্রয়ের স্থলে ৯৯,০০০ লিটার বিক্রয় দেখিয়ে অর্থাৎ ২৭,৪০০ লিটার ডিজেল বিক্রয় না দেখিয়ে/কম দেখিয়ে এবং উক্ত বিক্রয়কে বিভিন্ন তারিখে পরিচালন ক্ষতি দেখিয়ে সমন্বয় করে সংশোধিত টিএসএলআর প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করেন। যারা জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্নসাতের সামিল। আপনার এই কার্যকলাপের কারণে কোম্পানীর আটাশ লক্ষ ছেচল্লিশ হাজার আটত্রিশ টাকা আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এর দায় সম্পূর্ণরুপে ডিপো প্রধান হিসেবে আপনার উপরই বর্তায়।

এমডির স¦াক্ষরিত পত্রে আরও বলা হয়, আপনি জাহিদ সারওয়ার মোংলা অয়েল ইনস্টলেশনে দায়িত্ব পালনকালে উপ-মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন) কর্তৃক গঠিত ৩ সদস্যের কমিটি কর্তৃক গত ১৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখে সরেজমিনে মোংলা অয়েল ইনস্টলেশনে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। উক্ত কমিটি গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রতিবেদন দাখিল করে। পরিচালনা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান এবং প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, আগস্ট ২০২৪ মাসে মোংলা অয়েল ইনস্টলেশনে ২৫,৫৮৩ লিটার ডিজেল অর্থাৎ বিক্রয়/ সরবরাহ ৮,৪৪,৬০০ লিটার ডিজেলের ৩.০৩ শতাংশ পরিচালন ক্ষতি দৃশ্যমান, যা অগ্রহণযোগ্য। অনুমোদিত ক্ষতি ২,৫৩৪ লিটার বাদ দিলে নীট ক্ষতি দাঁড়ায় ২৩,০৪৯ লিটার ডিজেল, যার মূল্য ২৩,৭১,৯৭৩ টাকা। যাহা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নহে। উক্ত আর্থিক ক্ষতির দায় আপনার উপরই বর্তায়। পত্রে বলা হয়, উক্ত অভিযোগগুলো হতে প্রমাণিত হয়, আপনি কোম্পানীর ৫২,১৮,০১১ টাকা হিসাবের গরমলি দেখিয়ে আত্নসাৎ করেছেন। যা আপনার নিকট হতে আদায়যোগ্য এবং কৃত অপরাধের জন্য আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। আপনার উক্ত কার্যকলাপে কোম্পানীর আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও সুনাম বিনষ্ট হয়েছে। অতএব আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না, তার উপযুক্ত কারণ কোম্পানীকে অবিহিত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। একইসাথে আপনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুরুতর বিধায় আপনাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।

উল্লেখ্য গেল বছরের ১৫ অক্টোবর দৈনিক সংগ্রামের সেই অনুসন্ধানে রিপোর্টেও যমুনা অয়েল কোম্পানীর শীর্ষ কর্মকর্তা এ কে এম জাহিদ সরওয়ারের বিরুদ্ধে ৯৯,০০০ লিটার তেল গড়মিলের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। মোংলা অয়েল ইনস্টলেশন ডিপোতে মাসিক লাভ-ক্ষতির হিসাবে তেল বিক্রির পরিমাণ পরিবর্তন করে জাহিদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। লাভ-ক্ষতির বিবরণে দেখা যায়, জুনে প্রথমে বিক্রি দেখানো হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৪০০ লিটার। এর মধ্যে অপারেশনাল ক্ষতি ১ হাজার ৫৯০ ও তাপমাত্রাজনিত (৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) ক্ষতি হয় ৭১৮ লিটার।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জাহিদ সারওয়ার সেই সময় এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাটের বিষেয় তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছি। আমার বাড়ি থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না।