# আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়: আইএসপিআর
# কারফিউ বেলা ১১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত ৩ ঘন্টা শিথিল
# জেলার বাইরে থেকেও জমায়েত করা হয়েছিল সন্ত্রাসীদের
নাছির উদ্দিন শোয়েব: নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের তান্ডবের জেরে উত্তপ্ত গোপালগঞ্জে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলাজুড়ে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীও টহল দিচ্ছে। বিজিবি, র্যাব, অতিরিক্ত পুলিশ ও আর্মড পুলিশের টহলে পুরো গোপালগঞ্জ ও আশেপাশের এলাকা কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টিত। এদিকে সরকারের জারিকৃত ২২ ঘন্টার কারফিউ শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার এর সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এ দিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা শিথিল থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত কারফিউ চলমান থাকবে বলে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী একই তথ্য জানিয়েছেন। বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় এক হাজার ৫০৭ জন পুলিশ সদস্যসহ সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিকল্পিত ভবে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছিল। জেলার বাইরে থেকেও জমায়েত করা হয়েছিল নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা-কমীদের।
এদিকে গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী হামলাকারীদের মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও তারা সেনাবাহিনীর ওপর বিপুলসংখ্যক ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয় বলে জানিয়ছে সেনাবাহিনী। ঘটনার পর থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় ২৫ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে চলমান অভিযানে গ্রেফতারের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ, সংঘর্ষের সময়ের ছবি, সোর্সের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে হামলা কারীদের সনাক্ত করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নিয়ে গুলি চালানো সন্ত্রাসী, ককটেল নিক্ষেপকারি, দেশীয় অস্ত্রসশস্ত্র নিয়ে যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এনসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল তাদের ধরতে রাতভর অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশ ও জেলা প্রশাসন বলছে-একজন সন্ত্রাসীরও পার পাওয়ার সুযোগ নেই। পুরো গোপালগঞ্জ এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কব্জায়। এখান থেকে কারো পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রয়োজনে কারফিউ বাড়িয়ে হলেও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হবে।
এদিকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা না হলেও যে কোনো সময় মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়ছে পুলিশ। সংঘর্ষের ঘটনায় যে চারজন নিহত হয়েছে তদের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। গোপালগঞ্জে যে এমন ঘটনা ঘটবে সে বিষয়ে আগাম গোয়েন্দা তথ্য ছিল কিনা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে ওই তথ্যটি ছিল না। এনসিপি নেতারাও অভিযোগ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনিও তো অনেক কিছু বলতে পারেন। যার যার বক্তব্য সে সে দেবে।
স্থানীয় জনগণের সাথে কথা বলে জানিয়েছে, তারা একধরণের আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাদের ভাষ্য, গোপালগঞ্জ সাধারণ মানুষের, এই জেলাটি কোনো একক দলের তকমা হতে পারে না। এখানে নানা শ্রেনীর মানুষের বসবাস। একটি শান্ত পরিবেশকে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে অশান্ত করার কারণে এখানের সাধারণ মানুষ এখন ভোগান্তিতে পড়েছে। এভাবে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সমালোচনা করতে শোনা গেছে অনেকের কাছে।
যা বলেছে আইএসপিআর: গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী হামলাকারীদের মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও তারা সেনাবাহিনীর ওপর বিপুলসংখ্যক ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপালগঞ্জ জেলায় একটি রাজনৈতিক দলের জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে আহ্বান করা জনসমাবেশ কেন্দ্র করে এলাকার একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা গত ১৬ জুলাই সংঘবদ্ধভাবে সদর উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিক আহত হন। এছাড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সরকারি যানবাহনে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে এবং প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
ওই রাজনৈতিক সংগঠনের সমাবেশ চলাকালীন মঞ্চে পুনরায় হামলা চালানো হয় এবং একইসঙ্গে জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এমতাবস্থায়, সেনাবাহিনী হামলাকারীদের মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা সেনাবাহিনীর ওপর বিপুল সংখ্যক ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং একপর্যায়ে সেনাবাহিনী আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে বিশৃঙ্খলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তিদের খুলনায় স্থানান্তর করা হয়। সর্বোপরি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পেশাদারত্ব ও ধৈর্যের সঙ্গে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলায় সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং প্রশাসন কর্তৃক জারি করা কারফিউ চলমান। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব এবং প্রশাসনের অন্য সংস্থাগুলো ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় রেখে কাজ করে যাচ্ছে। আইএসপিআর আরও জানায়, গতকাল বুধবার সকাল থেকে চলমান এই রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলায়, গোপালগঞ্জ জেলার জনসাধারণ অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে নিজেদের নিবৃত্ত রেখে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছেন। গুজব বা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে ধৈর্যধারণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও জননিরাপত্তা রক্ষায় সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পুলিশের প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে: পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জে বুধবারের সহিংসতায় চারজন নিহত এবং ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গণমাধ্যমে এ প্রতিবেদন সরবরাহ করে। পুলিশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত ৪ জনের লাশের পোস্ট মর্টেম করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত যৌথবাহিনী ও পুলিশ নাশকতার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গোপালগঞ্জ জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে এক হাজার ৫০৭ জন পুলিশ সদস্যসহ সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন কারফিউ জারি করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে।
পুলিশ প্রতিবেদনে ঘটনা প্রসঙ্গে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া মানুষের কথা শুনতে ১-৩০ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে মাসব্যাপী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১৬ জুলাই ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জ পৌর উন্মুক্ত মঞ্চে জাতীয় নাগরিক পার্টি এক জনসমাবেশ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। এই সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল সার্কিট হাউস এলাকা থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুলাহ, উত্তর অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব শামান্তা শারমিন, তাসনিম জারা, সিনিয়র মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, আরিফুল দাড়িয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা রওনা দেন। সমাবেশের নিরাপত্তার জন্য সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন তৎপর থাকে। সকাল সাড়ে ৯টায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের একটি সন্ত্রাসী দল গোপালগঞ্জ সদর থানার উলপুরে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলাসহ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় একজন পুলিশ পরিদর্শকসহ ৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সকাল ১১টার সময় গোপালগঞ্জ সদর থানার কংশুর বাসস্ট্যান্ডে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ পৌর শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক খান রিপনের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক সড়কে গাছ ফেলে এবং কাঠ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় গোপালগঞ্জ ইএনও’র গাড়ি সেখানে গেলে গাড়ি ভাঙচুরসহ সড়ক অবরোধ করে রাখে। এরপর সকাল সাড়ে ১১টার সময় কোটালীপাড়া থানার অবদার হাট এলাকায় কোটালীপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম দারিয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করে কোটালীপাড়া-পয়সার হাট সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে ২৮০০- ৩০০০ নেতাকর্মী রাস্তা অবরোধ করে রাখে।
সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে গোপালগঞ্জ সদর থানার কাঠি বাজার এলাকায় গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ পৌরসভার মামুনের নেতৃত্বে ২০০-৩০০ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গোপালগঞ্জ পৌরপার্ক সভাস্থলে পৌঁছানোর আগে দুপুর আনুমানিক ১টা ৪০ মিনিটে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ৫০-৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ককটেল বিস্ফোরণসহ ঢাল, দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মঞ্চে আক্রমণ করে। তারা মঞ্চের ব্যানার এবং চেয়ার ভাঙচুর করে। দুপুর ২টায় নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে ওঠেন। ইতোমধ্যে দুপুর সোয়া ২টায় গোপালগঞ্জ সদর থানার সাতপাড় বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তরা ২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ২টি মোটরসাইকেলে অগ্নি সংযোগ করে। উচ্ছৃঙ্খল জনগণ রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে ব্যারিকেড দেয় এবং বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুপুর পৌনে ৩টায় পদযাত্রা সভা সমাপ্ত করে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সভাস্থল ত্যাগ করেন। এই পদযাত্রা সভায় আনুমানিক ২০০ জন লোক উপস্থিত ছিল। সভা শেষে তাদের গাড়ি বহর পরবর্তী পদযাত্রার সভাস্থল মাদারীপুরের উদ্দেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রহরায় রওনা দিলে গোপালগঞ্জ পৌরসভার লঞ্চ ঘাটে আওয়ামী লীগ ও এর নিষিদ্ধ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আনুমানিক ৩টায় গাড়ি বহর আটকে দেয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশ উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তারা কোনও কথা না শুনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করে। এছাড়া নাশকতাকারীরা গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারসহ অন্যান্য সরকারি স্থাপনায় হামলা করে। এসময় সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় প্রায় ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হন বলে জানা যায়। নাশকতাকারীদের আক্রমণের ফলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এনসিপি নেতাকর্মীদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিরাপদে নিয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে বিকাল ৪টা ৫৮ মিনিটে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে যৌথ বাহিনীর সহায়তায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গাড়িতে করে বাগেরহাট হয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে চলে যান।
কাউকে ছাড় নয়, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি: সহিংসতার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল করিম মল্লিক। রেজাউল করিম মল্লিক জানান, গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন না করে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি আরও জানান, গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
জেলা কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার: বুধবারের হামলার ঘটনায় গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং কারারক্ষীদের সমন্বয়ে একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. তানভীর হোসেন। তিনি বলেন, বুধবারের হামলার পর নতুন করে আর যেন ঝামেলা না হয়, সেজন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে সে তুলনায় আজকের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। নতুন করে হামলার কোনও আশঙ্কা নেই।