নুরুল আমিন মিন্টু, চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন-যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের শতাধিক হেভিয়েট নেতা রয়েছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে এ উপজেলার প্রভাবশালী নেতাদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। গত ১১ মাসে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রথম সারির এসব নেতাকে গ্রেফতার করা হয়নি। যদিও দলীয় কোন্দল ও অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে কয়েকজন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন, তবে তারা অল্প সময়ের মধ্যেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৬ বছর ধরে গ্রেফতার হওয়ার পর জামিন পাওয়া তাদের জন্য কঠিন ছিল। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হতো। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা দ্রুত জামিনে বের হয়ে আসছেন। জামিনযোগ্য মামলা দিয়ে তাদের ‘সুবিধা’ দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শরীফের বিরুদ্ধে।

বিএনপি-জামায়াত নেতারা আরও বলেন, ওসি মোহাম্মদ শরীফের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ওসির সঙ্গে নেতাদের একাধিকবার বৈঠকের তথ্যও তারা দিয়েছেন। দাবি করা হয়েছে, ওসি নিয়মিত মাসোহারা নিচ্ছেন এবং যারা তা দিতে অস্বীকৃতি জানান, শুধু তাদের বিরুদ্ধেই অভিযান পরিচালনা করেন।

‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে ওসি মোহাম্মদ শরীফ প্রকৃত অপরাধীদের না ধরে চুনোপুঁটি গ্রেফতার করে কোটা পূরণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি হলো-আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট অপরাধীর বিষয়ে তথ্য দিলে ওসি সেই তথ্য ‘স্ক্রিনশট’ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে দেন।

তেল পাচারকারীর কাছ থেকে মাসোহারা গ্রহণের অভিযোগ :  আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস শুক্কুর, যিনি 'তেল শুক্কুর' নামে পরিচিত, তার কাছ থেকে প্রতিমাসে ৪ লাখ টাকা মাসোহারা গ্রহণ করছেন কর্ণফুলী থানার ওসি-এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, গত ১৭ বছর ধরে কর্ণফুলী নদীপথ ব্যবহার করে দেশি-বিদেশি জাহাজ ও জ্বালানিবাহী ট্যাংকারের মাধ্যমে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নামের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল পরিমাণ তেল পাচার করে আসছেন শুক্কুর। প্রতিমাসে প্রায় শত কোটি টাকার তেল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ডঙ্গারচর এলাকা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়।

বালি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উৎকোচ নিলেন ওসি : শিকলবাহা ভেল্লাপাড়ার বালির ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে ওসি মো. শরীফের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় মারামারির ঘটনার অজুহাতে তিনি বালির বেচাকেনা বন্ধ করে দেন এবং জানান, “সিএমপি কমিশনার স্যার বালির ব্যবসা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।” তবে তিনদিন পর ওসি পুনরায় ব্যবসা চালু করার অনুমতি দেন-তবে তা উৎকোচ গ্রহণের পরই। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন বকুলের মালিকানাধীন “মহিউদ্দিন এন্টারপ্রাইজ” থেকে ১ লাখ টাকা, শিকলবাহা ইউপির পলাতক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের প্রতিষ্ঠান “আরাফাত এন্টারপ্রাইজ” থেকে ১ লাখ টাকা এবং “থ্রি স্টার” বালু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মালিক নুরুল আলমের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা উৎকোচ নেন ওসি শরীফ। এছাড়া, প্রতি মাসেই এসব ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ওসিকে টাকা দিয়ে মুক্ত হন আনোয়ার সওদাগর : চরপাথরঘাটার পুরাতন ব্রিজঘাট এলাকার ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার সওদাগরকে গ্রেফতারের পর ৫ লাখ টাকা গ্রহণের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্ণফুলী থানার ওসি মো. শরীফের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর সিডিএ’র জমি অবৈধভাবে দখলকারী হিসেবে পরিচিত আনোয়ার সওদাগর কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। সম্প্রতি তাকে আটক করে পুলিশের একটি গাড়িতে প্রায় ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এরপর ৫ লাখ টাকা নেওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন স্বয়ং আনোয়ার সওদাগর। তিনি বলেন, “আমাকে পুলিশের গাড়িতে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ছাড়া পাই।”

আওয়ামী লীগ নেতা আজিজের সঙ্গে ওসির গোপন বৈঠক : আওয়ামী লীগ নেতা ও শিপিং ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান ওরফে সমতার আজিজের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন কর্ণফুলী থানার ওসি। অভিযোগ রয়েছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আজিজ তার জন্য নগদ ১ লাখ টাকা ও মূল্যবান উপহারসামগ্রী পাঠান। শুধু তা-ই নয়, নিয়মিতভাবেই তিনি ওসিকে প্রতিমাসে ১ লাখ টাকা করে উৎকোচ দিয়ে থাকেন। চলতি জুলাই মাসের ৩ তারিখেও জনৈক এক ব্যক্তির মাধ্যমে নগদ টাকা পৌঁছে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা ওসিকে দিয়ে আসছেন আজিজ। এ ধরনের লেনদেনের ফলে কর্ণফুলী উপজেলার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত আজিজ এবং তার ভাই মনির আইনের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

প্রতিমাসে মাসোহারা দেন আওয়ামী লীগ নেতা সাবের আহমদ : চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা মৎস্য ব্যবসায়ী সাবের আহমদের কাছ থেকে প্রতিমাসে ১ লাখ টাকা করে মাসোহারা নিচ্ছেন কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শরীফ-এমন অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ওসি’র পছন্দ অনুযায়ী বাসায় নিয়মিতভাবে মাছ পাঠান সাবের। এ কারণে তিনি প্রকাশ্যে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং এলাকায় নির্বিঘ্নে চলাফেরা করছেন, যদিও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সাবের আহমদ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব ব্যবহার করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের একজন অর্থযোগানদাতা হিসেবেও পরিচিত।

মাসোহারা  না দেওয়ায় গ্রেফতার মোহাম্মদ আলী : প্রতি মাসে এক লাখ টাকা করে মাসোহারা না দেওয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মৎস্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীকে-এমন অভিযোগ উঠেছে কর্ণফুলী থানার ওসির বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরপাথরঘাটা এলাকার দুই ব্যক্তির মাধ্যমে ওসি একাধিকবার মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে বসার চেষ্টা করেন। উদ্দেশ্য ছিল মাসিক মাসোহারার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা। তবে মোহাম্মদ আলী বৈঠকে বসেননি এবং কোনো প্রকার অর্থ দেওয়ায় রাজি হননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওসি তাকে গ্রেফতার করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রেফতারের পর আলীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলার ভয় দেখিয়ে ৪ লাখ টাকা আদায় করেন ওসি-এমনটিও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওসির বাসায় ফার্নিচার দিলেন আওয়ামী লীগ নেতা হোসাইন : চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা হোসাইন, যিনি বন্দরের চোরাকারবারি হিসেবেও পরিচিত-তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকার ফার্নিচার নিয়েছেন ওসি মো. শরীফ। হোসাইনের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে ওসি শরীফ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকায় তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসে। সেই বিয়ের ছবি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এবং পরে তা ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হোসাইনের কাছ থেকে শুধু উপহার নয়-প্রতিমাসে মাসোহারাও নেন ওসি মো. শরীফ। এর ফলে হোসাইন এলাকায় নির্বিঘ্নে চোরাচালানসহ নানা অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কিছু বলার সাহস পায় না।

ছবি এডিট করে আওয়ামী লীগ নেতার রূপ দিয়ে গ্রেফতার শ্রমিক কল্যাণ কর্মী : জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে জামায়াতের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কর্মী আবদুল মন্নানকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করেছে ওসি মো. শরীফ। চরলক্ষ্যা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মন্নানকে গ্রেফতারের আগে একটি আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানের ছবি সম্পাদনা করে তাকে দলটির নেতা হিসেবে প্রচার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, শিকলবাহা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের এক প্রভাবশালী ভূমিদস্যুর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করে মন্নানকে গ্রেফতার করেন ওসি এবং চান্দগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এই ঘটনায় চরপাথরঘাটার দুই কথিত নেতা সহযোগিতা করেছেন, যাদের একজনকে ওই ভূমিদস্যু নিজের আত্মীয় পরিচয়ে পরিচিত করিয়ে থাকেন। স্থানীয়দের মতে, শিকলবাহার এই ভূমিদস্যু ৫ আগস্টের পূর্বে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কিছু নেতাকে সঙ্গে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গঠন করে। এরপর বিরোধপূর্ণ জমি কমদামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হন। বর্তমানে চরপাথরঘাটার দুই কথিত নেতাকে নিয়ে গঠিত নতুন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওই ভূমিদস্যু অব্যাহতভাবে দখলবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন।

জমি বিরোধের জেরে নেজামকে আওয়ামী লীগ নেতা বানিয়ে গ্রেফতার: জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে চরফরিদ গ্রামের সওদাগর গোষ্ঠীর বাড়ির বাসিন্দা নেজামকে আওয়ামী লীগ নেতা বানিয়ে গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে। গ্রেফতারকৃত নেজাম বাবা আব্দুল লতিফ জানান, “আমার ছেলে কোনোদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। ইউপি নির্বাচনে সে সোলায়মান তালুকদারের পক্ষে কাজ করেছিল, এতটুকুই।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের জমির উপর একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করছে। তারা চরপাথরঘাটার এক ব্যক্তির মাধ্যমে ওসিকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আমার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।” নেজামের পরিবার এ ঘটনাকে প্রতিহিংসামূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছে।

চট্টগ্রামে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন কর্ণফুলীর ওসি: চট্টগ্রাম শহরের অভিজাত এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন ওসি মোহাম্মদ শরীফ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলীতে ওসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি ক্রয় করেন। বর্তমানে সেখানে বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ চলছে পুরোদমে। বাড়ি নির্মাণের জন্য ব্যাংক এশিয়া থেকে ঋণ নেওয়ার দাবি করলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ, এটি শুধুমাত্র লোকদেখানো। স্থানীয়দের ভাষ্য, ওসি মোহাম্মদ শরীফ বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন, যার একটি বড় অংশ এই সম্পদ নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। এলাকাবাসীরা আরও জানান, তার দ্রুত সম্পদ বৃদ্ধি এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি চাকরির সীমিত বেতনে এত বড় সম্পদ অর্জনের বৈধ উৎস কী ? সচেতন মহলের দাবি, বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি।

আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ওসির ঘনিষ্ঠতা : চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কথিত অবৈধ ঝুট ব্যবসায়ী মো. হাসমত আলীর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন ওসি মো. মোহাম্মদ শরীফ। অভিযোগ রয়েছে, থানায় যোগদানের পর থেকেই ওসি শরীফের সঙ্গে হাসমতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্থানীয়দের ভাষ্য, একটি পোশাক কারখানায় প্রায়শই হাসমত আলী গোপন বৈঠকে অংশ নেন ওসি। অথচ এ ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ঝুট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তবুও প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নিয়ে তাকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, হাসমত আলীকে গ্রেফতার না করে বরং তার ব্যবসাকে রক্ষা করতে সহযোগিতা করছেন ওসি। মাসিক ভিত্তিতে মোটা অঙ্কের মাসোহারা গ্রহণের বিনিময়ে এসব অনিয়মে চোখ বন্ধ করে আছেন তিনি।

পেয়ার আহমদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেন ওসি : মইজ্যারটেক এলাকার তানজিন স্যানেটারির দোকানি পেয়ার আহমদকে গ্রেফতার করেন কর্ণফুলী থানার ওসি মোহাম্মদ শরীফ। অভিযোগ উঠেছে, গ্রেফতারের পর ‘হালকা মামলা’ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পেয়ার আহমদের পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের দাবি, ওসি শরীফ তাকে হত্যা মামলা ও একাধিক গুরুতর মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে এই টাকা আদায় করেন। স্থানীয়দের ভাষ্য, বিষয়টি একটি পরিকল্পিত চাঁদাবাজির উদাহরণ।

বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বক্তব্য : কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদপ্রত্যাশী মাহমুদুর রহমান মান্না অভিযোগ করেছেন, কর্ণফুলী থানার ওসির আচরণ শিষ্টাচারবহির্ভূত ও পক্ষপাতদুষ্ট। তিনি বলেন, “ওসি কারও সঙ্গে ভদ্রতা বা সৌজন্য দেখান না। ডেভিলরা (অপরাধী চক্র) প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা প্রমাণ করে ওসির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। না হলে তারা এতটা বেপরোয়া হতে পারে না।” তিনি জানান, শুক্রবার রাতেই এক ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে, যা থানার আইন-শৃঙ্খলার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে।

একই ধরনের বক্তব্য দেন কর্ণফুলী উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মনির আবসার চৌধুরী। তিনি বলেন, “সাধারণ ও ছোটখাটো লোকজনকে ধরেই কোটা পূরণ করা হচ্ছে, কিন্তু বড় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা দেওয়া হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক তৈরি করছে।” নেতৃবৃন্দ জানান, আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা, অবৈধ অর্থ লেনদেন, সাধারণ মানুষের হয়রানি এবং সম্পদ গড়ার অভিযোগ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতার ওপর প্রশ্ন তুলছে।

অভিযোগ অস্বীকার করলেন ওসি শরীফ : কর্ণফুলী থানার ওসি মোহাম্মদ শরীফ অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, “এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমি এই থানায় যোগদানের পর থেকে বহু অপরাধী, বিশেষ করে মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করেছি। গ্রেফতার করেছি অনেক ডেভিল। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে। আমার এসব সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।”

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর জোন) আমিরুল ইসলাম ও মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি