রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারীতে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-আরডিএ নির্মিত কমপ্লেক্স ভবনটি হওয়ার কথা ছিল চব্বিশের ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’। কিন্তু সেটি বাদ দিয়ে ব্যবসা করার জন্য একটি বিতর্কিত মহলকে স্কুল হিসেবে ভাড়া দিয়েছে আরডিএ। এর সঙ্গে পতিত রাজনৈতিক মহলের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান আরডিএর চেয়ারম্যান থাকাকালে শুধু শেখ হাসিনাকে খুশি করতে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার’ নির্মাণ প্রকল্প নেন তার বাড়ির পাশে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৬৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে কেবল ভবন নির্মাণে। এরপর আরডিএ দ্বিতীয় ধাপে বাকি টাকা চেয়েছিল। নগরীর তালাইমারি মোড়ে ২০১৭ সালে এটি নির্মাণে প্রকল্প হাতে নেয় আরডিএ। প্রথম দফায় ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন এবং অবকাঠামো নির্মাণ খাতে ব্যয় ধরা হয় ৬২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ভবনটি প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী নির্মাণকৃত এ চত্বরটির বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিং, আর্ট গ্যালারি ও জলধারাবেষ্টিত শেখ মুজিবের ভাস্কর্য তৈরি করার কথা ছিল। এছাড়া সাউন্ড সিস্টেম, লাইটিং এবং ডিজিটাল স্ক্রিনযুক্ত স্থায়ী আর্ট গ্যালারি ও শেখ মুজিব স্মৃতি নিয়ে জাদুঘর করার কথা। ফার্স্ট ফ্লোরে রেস্তোরাঁ, ল্যান্ডস্কেপ, উন্মুক্ত স্থানে বসা এবং বিনোদনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়।
এদিকে ২০২৪-এর ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ বাতিল করে। ফলে নির্মাণের ছয় মাস পার হলেও এটা কি হিসেবে ব্যবহার হবে তা নিয়ে নিশ্চিত ছিল না কর্তৃপক্ষ। ফলে ছয় মাস বন্ধ ছিল কমপ্লেক্সটি। একজন কর্মকর্তা জানান, তারা নবনির্মিত ভবনটির নাম পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠাচ্ছে। কারণ এটি আর শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হবে না। তবে রাজশাহী মহানগরীর চব্বিশ-চেতনার মানুষেরা একে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে গড়ে তোলার দাবি করে আসছেন। এনিয়ে একটা ঐকমত্যও গড়ে উঠেছে। এই কমপ্লেক্সের অদূরেই রয়েছে দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
আরডিএ’র ব্যবসা!
আরডিএ একদিকে এই কমপ্লেক্সের নতুন নাম দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। আবার নিজেরা এটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে ‘ক্যামব্রিয়ান স্কুল’ নামে প্রতিষ্ঠান তাদের সাইনবোর্ডও ঝুলিয়েছে। অনুমোদন ছাড়াই সেই স্কুলের শিক্ষক নিয়োগও শুরু হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তথ্য গোপন করে আরডিএর নবনির্মিত ভবন ভাড়া নিয়ে ক্যামব্রিয়ান স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান লায়ন খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে ৩শ’রও বেশি মামলা রয়েছে। গত জুলাইয়ে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে তিনি কারাগারে। অথচ থেমে নেই তার ব্যবসা। ইতোমধ্যে তিনি রাজশাহীতে ক্যামব্রিয়ান স্কুলের ফ্র্যাঞ্চাইজি বিক্রি করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, এই কমপ্লেক্সে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর হওয়ার কথা ছিল। তা না করে ভবনটির মালিক রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-আরডিএ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে জুলাইয়ের চেতনাবিরোধী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছে। এরই মধ্যে আরডিএ’র কমপ্লেক্সটি জুলাইয়ের চেতনাবিরোধী ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া বাতিলের দাবিতে গত বুধবার ভবনটির সামনে বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হয়। জুলাই আন্দোলনের একজন সংগঠক বলেন, ‘কমপ্লেক্সটি ভাড়া দেয়ার জন্য নির্মিত হয়নি। বরং আরডিএর উদ্যোগেই জুলাইয়ের চেতনা ধারণ ও নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এখানে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর হওয়া উচিত ছিল।’ জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও রাকসুর নবনির্বাচিত এজিএস এমএম সালমান সাব্বির বলেন, ‘যে স্কুলটিকে ভাড়া দেয়া হয়েছে তার আসল মালিক ফ্যাসিবাদের দোসর কারাগারে। জুলাই বিপ্লবপরবর্তী ফ্যাসিবাদের কোনো চিহ্ন আমরা রাখতে দেবো না। কাজেই আরডিএ বা যারাই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’