কাজীপুর সিরাজগঞ্জ থেকে আব্দুল মজিদ : দেশের প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। ফল হিসেবে মানুষের কাছে কাঁঠালের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এই গাছের পাতার তেমন কোন চাহিদা ছিলো না। অথচ সময়ের পরিবর্তনের সাথে এই গাছের পাতা হয়ে উঠেছে গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গ্রাম অঞ্চলে গবাদিপশুকে অনেকেই কাঁঠাল গাছের পাতা খাওয়ায়ে থাকে। বর্তমানে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কাঁঠাল গাছের পাতা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। কাজিপুরের হাট-বাজারগুলোতে এখন কাঁঠাল পাতার রমরমা ব্যবসা চলছে। প্রতি হাটবারে এবং বাজারগুলোতে প্রতিদিনই রাস্তার পাশে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে চলে কাঁঠাল পাতার কেনাবেচা। মূলত গোচারণভূমি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ঘাসের ওপর। এতে করে পরিবর্তন এসেছে ছাগল-ভেড়ার খাদ্যাভ্যাসেও। এসব প্রাণীর এখন অন্যতম খাবার হচ্ছে ভাত, মাড়, কাঁঠালপাতা ও ভুসি। ঘাসের পরিবর্তে কাঁঠাল পাতার চাহিদা বাড়ায় অনেকেই এ পাতা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন স্বাচ্ছন্দ্যে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে গেছে গেছে, উপজেলার ঢেকুরিয়া হাট, সোনামুখী হাট, ছালাভরা বাজারে ভোর থেকে রাস্তার পাশে ভ্যানের উপর কাঁঠাল পাতার আঁটি সাজিয়ে রেখেছে পাতা ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা এসে উল্টে পাল্টে দেখে দরদাম করে তা কিনে নেন। ঢেকুরিয়া বাজারে দীর্ঘ দিন ধরে পাতা বিক্রি করছেন মমতাজ মিয়া। তিনি জানান, আগেতো খড় এবং ঘাস বিক্রি করতাম। এখন এসবের দাম বেশি। পাইকারি কিনে এনে গ্রাহকের কাছে বেচে তেমন লাভ হয় না। তাই একবার কোরবানীর ঈদের আগে আমার নিজের গাছের কাঁঠাল পাতা আঁটি করে হাটে আনলাম। দেখি অল্প সময়ের মধ্যে তা বিক্রি হলে গেলো। দামও ভালো পেলাম। এরপর থেকে সারা বছরই এই হাটে ও বাজারে কাঁঠাল পাতা বিক্রি করছি। প্রতিদিন খরচ বাদে ৪ শত থেকে ৬ শত টাকা লাভ হয়। এই হাটের আরেক পাতা ব্যবসায়ী পলাশপুর গ্রামের আব্দুর রহমান জানান, অন্যেরে দেখাদেখি আমিও ঘাষ বিক্রির পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাঁঠাল গাছের পাতা কিনে আনি। এরপর ছোট ছোট সাত আটটি ডাল একত্রে আঁটি করি। ডাল ভেদে প্রতিটি আঁটি বাজারে দশ থেকে পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি করি। তিনি আরও জানান, পাতাভেদে একেকটি কাঁঠাল গাছ তিনশ থেকে পাঁচশ টাকায় কিনি। পরে গাছে উঠে ছোট ছোট ডাল সমেত পাতাগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। কিছুদিন পরে ওই গাছে আবারো পাতা গজায়। গাছেরও ক্ষতি হয়না। বিলচতল গ্রামের কাঁঠাল গাছের মালিক ফারুক হোসেন বলেন, “আগে এসব পাতা গাছ থেকে এমনিই ঝরে পড়ত। আমরা ওসব কুড়াতামও না। কিন্তু এখন ব্যবসায়ীরা এসে আগেভাগেই কিনে নিয়ে যায়। এতে বাড়তি আয় হয়, গাছও পরিষ্কার থাকে।” স্থানীয় আরেকজন গাছ মালিক তজু মন্ডল বলেন, “কাঁঠাল পাতার এমন চাহিদা আগে কখনো কল্পনাও করিনি। আমার বাড়িতে কয়েকটি গাছ আছে। সেখান থেকে বছরে দুইবার ভালো আয় হয়। বিশেষ করে ঈদের সময় এটি একটি বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দেয়।” সোনামুখী বাজারে কাঁঠাল পাতা কিনতে আসা মহিদুল ইসলাম জানান, দুটি খাসি রয়েছে। প্রতিদিন ২৫ টাকায় ছোট ৩ আঁটি পাতা কিনি। আরেক ক্রেতা রফিক মিয়া জানান, তার বাসায় ৩টি ছাগল রয়েছে। এ জন্য প্রতিদিন ৫০ টাকায় বড় এক আঁটি কাঁঠালপাতা কেনেন তিনি। একদিন না পাওয়া গেলে খুব সমস্যায় পড়তে হয় তাকে। রিকশাচালক আরিফুল জানান, সামনে কোরবানির জন্যে দুটি খাসি পালন করছি। খাসিকে ভুসির পাশাপাশি কাঁঠালপাতা খাওয়াই। আগে ভাত খাওয়ালেও চালের দাম বাড়ায় কাঁঠালপাতা ও ভুসি খাওয়াচ্ছি। কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম জানান, এখনতো ফলের চাইতে কাঁঠালের পাতার দাম অনেক বেশি। মানুষ বছরে দুইবার করে পাতা বিক্রি করে বেশ টাকা পাচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। এটি তাদের জন্য একটি বাড়তি আয়।