জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম সিনেট অধিবেশন গত শনিবার (২৮ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ-এর সভাপতিত্বে। অধিবেশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৬৯০ কোটি ১৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকার প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৪১৭ কোটি ০৩ লাখ ১৯ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করা হয়।

কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এ টি এম জাফরুল আযম প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। ঘোষিত বাজেটে মোট রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯০ কোটি টাকার বেশি, যেখানে রাজস্ব আয় ৫৬৫ কোটি ৩৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১২৪ কোটি ৮৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এই ঘাটতি পূরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে সরকারের কাছে অনুদানের আবেদন জানানো হবে বলে জানানো হয়। বাজেটে পরীক্ষার মানোন্নয়ন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করে সর্বোচ্চ ২৮৯ কোটি ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে পরীক্ষা পরিচালনা খাতে। পাশাপাশি বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৮৮ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা। পেনশন ও অবসর সুবিধায় ৫১ কোটি ২৮ লাখ ১৮ হাজার টাকার বরাদ্দ প্রমাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল কাঠামোয় বড় ধরনের পুনর্বিন্যাসের সূচনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পূর্বে চাকরিচ্যুত ৯৮৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পুনর্বহাল ও ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অবসরজনিত ব্যয়ের কারণে ১০৭ কোটিরও বেশি অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপ দেখা দিয়েছে। ভিসি এ বিষয়ে বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুধু প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান নয় -এটি একটি বৃহৎ জনসম্পৃক্ত কাঠামো। কাজেই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও আমাদের বাজেটে এসব বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়াস চালানো হয়েছে। সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৫১২ কোটি ১৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, যেখানে প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৭২১ কোটি ৬৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।

সিনেট অধিবেশনের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয় এবং পরে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। তাঁদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সকল সদস্য। অধিবেশনে অংশ নেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মোকলেস উর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মোঃ লুৎফর রহমান ও প্রফেসর ড. মোঃ নূরুল ইসলাম, বিভাগীয় কমিশনারবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, কলেজের অধ্যক্ষ ও ৭৭ জন সিনেট সদস্যসহ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আমন্ত্রিত সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ।

অধিবেশনের পূর্বে ভিসি প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চ্যান্সেলর ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামফলক উন্মোচন করেন। সিনেট অধিবেশনের শেষ প্রান্তে তিনি বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি শক্তিশালী, দায়িত্বশীল ও শিক্ষাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে দক্ষ ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের দিকেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।