বেনাপোল সংবাদদাতা : বাংলাদেশ থেকে কিছু পণ্যের আমদানির উপর বন্দর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় বেনাপোল স্থলবন্দরে দাড়িয়ে আছে গার্মেন্টস পণ্যবাহী ৩৬টি ট্রাক।

এছাড়া, বেনাপোল বন্দরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আরও ৫০টি পণ্য বোঝাই ট্রাক।

এ বিষয়ে কথা হয় ভারতের প্রেটাপোল বন্দরের কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ডফরওয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তীর সাথে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে বন্দর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি)।

তবে যে সকল পণ্যের এলসি/টিটি হয়েছে সেগুলো যাতে আমদানি করা যায় সেজন্য দু’দেশের কাস্টম ও বন্দরের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা চলছে।

জানা যায়, ভারতীয় বন্দরগুলি দিয়ে বাংলাদেশি কিছু পণ্য যেমন- রেডিমেড পোশাক ও খাদ্যসামগ্রীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করছে ভারত।এই জাতীয় পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে ভারত হয়ে নেপাল বা ভুটানের মতো দেশে ওই সব পণ্য যাওয়ার ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞা থাকছে না।

একইসাথে, ফল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য, তুলা, সুতির পোশাক, প্লাস্টিক এবং পিভিসি দিয়ে তৈরি জিনিস, রঞ্জকের মতো পণ্য বাংলাদেশ থেকে আসাম, মিজোরাম, মেঘালয় কিংবা ত্রিপুরার কোনও শুল্ককেন্দ্র্রে প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা এবং ফুলবাড়ি শুল্ককেন্দ্রের ক্ষেত্রেও একই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা হয়েছে।তবে বাংলাদেশ থেকে আসা মাছ,এলপিজিও ভোজ্যতেলের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।

এ বিষয়ে ভারত সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগ কর্তৃক ১৭ মে, ২০২৫ তারিখ’বিদেশী বাণিজ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত ০৭/২০২৫-২৬ নং বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা যায়,বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির উপর বন্দর আমদানি নীতি/বন্দর বিধিনিষেধ রয়েছে।

(১) তৈরি পোশাকের (আরএমজি) সকল এইচএস কোড কোন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি অনুমোদিত হবেনা। তবে এটি কেবল নহাভা শেভা এবং কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে অনুমোদিত। (২) ফল/ফলের স্বাদযুক্ত এবং কার্বনেটেড পানীয় (৩) প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য ( বেকড পণ্য, স্ন্যাকস, চিপস এবং মিষ্টান্ন)। (৪) তুলা এবং তুলার সুতার বর্জ্য। (৫) প্লাস্টিক এবং পিভিসি তৈরি পণ্য, নিজস্ব শিল্পের জন্য ইনপুট তৈরি করে এমন রঞ্জক, রঞ্জক, প্লাস্টিকাইজার এবং দানা ছাড়া। (৬) কাঠের আসবাবপত্র। এসকল পণ্য বাংলাদেশ থেকে কোনও এলসিএসএস/আইসিপিএস মেঘালয়, মিজোরাম; আসাম, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা এবং ফুলবাড়ির এলসিএস এর মাধ্যমে আমদানি করা যাবে না।

উক্ত বিজ্ঞপ্তির ২নং প্যারায় উপরোক্ত বিধিনিষেধগুলি বাংলাদেশ থেকে ভারতে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল এবং চূর্ণ পাথর আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না মর্মে উল্লেখ্য করা হয়।

এছাড়া, ৩নং প্যারায় উপরোক্ত বিধিনিষেধ গুলি ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল/ভুটানে বাংলাদেশের রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না মর্মেও উল্লেখ্য করা হয়।

বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিংএন্ড ফর ওয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান বলেন, ভারত সরকার স্থলবন্দর দিয়ে কিছু পণ্যের আমদানি নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বেনাপোল স্থলবন্দরে ৩৬টি গার্মেন্টস পণ্য বোঝাই ট্রাক ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় দাড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া, বন্দরের বাইরে আরও ৫০/৬০টি ট্রাক অপেক্ষা করছে।

ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াড়িং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রর্বতী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। যেসব পণ্যের এলসি/টিটি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। সেসব পণ্য যাতে আমদানি করা যায় তার জন্য কাস্টমসে আলোচনা চলছে

বেনাপোলের কয়েকজন রপ্তানিকারক জানান, স্থলপথে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে কার্যত ভারতের সঙ্গে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে থাকি কলকাতায়। সেটা বন্ধ হয়ে গেল। নৌপথে পণ্য পরিবহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এতে খরচের পাশাপাশি সময়ের কারণে আমরা পারবো না।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন,ভারত সরকার স্থলবন্দর দিয়ে গার্মন্টেস সামগ্রী আমদানি নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে পড়ছে ব্যবসায়ীরা।স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে খরচ অনেক কম হতো কিন্তু সমুদ্র ও বিমান পথে পণ্য রপ্তানি খরচ অনেক বেশি হবে।

তিনি আরো বলেন বছরে ১০ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশিরভাগ আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। এ পথে রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পাট, পাটের তৈরি পণ্য, গার্মন্টেস, তৈরি পোশাক, কেমিকেল, বসুন্ধরা টিসু, মেলামাইন,মাছ উল্লেখ্য যোগ্য।’

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন,এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি আমরা পাইনি। পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। বেনাপোল বন্দর দিযে শনিবার পর্যন্ত সব পণ্য রপ্তানি হয়েছে।তবে রোববার সকাল থেকে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হলেও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাক জাতীয় কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি।বিভিন্ন ভাবে জানতে পরেছি ৩০-৩৫ ট্রাক পণ্য এখানে আটকে আছে।

ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার কোন প্রভাব পড়েনি ভোমরা ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : নিজেদের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্য প্রবেশে ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার কোন প্রভাব পড়েনি সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে। ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার আওতায় যে সকল পণ্য রয়েছে তার মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশি তৈরি পোশাক মাঝে মধ্যে ১/২ ট্রাক এই বন্দর দিয়ে যায়। তবে সেটিও অনেক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। যে কারণে পণ্য প্রবেশে ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার কোন প্রভাব পড়েনি ভোমরা বন্দরে। ভোমরা স্থল বন্দরের সব ধরনের আমাদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদক আব্দুল গফুর সরদার বলেন, ভারত সরকার স্থলবন্দর দিয়ে গার্মেন্ট সামগ্রী আমদানি নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কোন সমস্যা হয়নি ভোমরা বন্দরের। কারণ এই বন্দর দিয়ে গার্মেন্ট সামগ্রী খুবই কম পরিমাণ ভারতে যায়। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দর বেশি ব্যহার করায় আমাদের এখান দিয়ে মাসে ২/১টি গাড়ি ভারতে যেত। বর্তমান সময়ে যার সংখ্যা ছিল খুবই কম। ফলে ভোমরা বন্দরে আমাদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা জানান, স্থলপথে গার্মেন্ট সামগ্রী রপ্তানিতে খরচ অনেক কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে থাকে কলকাতায়। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যশোরের বেনাপোল বন্দর বেশি ব্যবহার করতো। মাঝে মধ্যে বাংলাদেশি পোশাকের ২/১টি চালান ভোমরা বন্দর দিয়ে ভারতে যেতে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে এই বন্দর দিয়ে কোন গার্মেন্ট সামগ্রী ভারতে যাচ্ছে না। ফলে কিছু নির্দিষ্ট পণ্য প্রবেশে ভারত সরকারের নিষেজ্ঞার কোন প্রভাব পড়েনি সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে।

ভোমরা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মো. রুহুল আমিন বলেন, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে নির্দিষ্ট র্সখ্যাক পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। কিছু পণ্য প্রবেশে ভারতীয় নিষেজ্ঞার মধ্যে খুবই স্বল্প পরিমাণ বাংলাদেশি তৈরি পোশাক এই বন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। মাঝে মধ্যে ১/২ ট্রাক তৈরি পোশাক এই বন্দর দিয়ে ভারতের কোলকাতায় যায়। ফলে ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার কোন প্রভাব পড়েনি ভোমরা বন্দরে। ভোমরা স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ভারত নিজেদের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশী পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। শনিবার (১৭ মে) ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের কিছু নির্দিষ্ট পণ্য ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে আসায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এরপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকে কোনো তৈরি পোশাক ভারতের কোনো স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। যা তাৎক্ষণিকভাবে কার‌্যকর হবে। বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র নহাভা শেভা এবং কলকাতা সমুদ্র বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আনা যাবে। তবে ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হবে সেগুলোর ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

আমাদের পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান : দেশের শুল্ক স্টেশন এবং স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশী কিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত।

দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধায় এর খুব বেশি প্রভাব পড়বেনা বলে মন্তব্য করেছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক এবং শ্রমিকরা।

তারা বলছেন এই বন্দর দিয়ে কিছু প্লাস্টিক পন্য রপ্তানি করা হয়। এই পণ্য রপ্তানি হচ্ছেনা। গত রোববার এসব পণ্যবাহী কয়েকটি ট্রাক বন্দর থেকে ফেরত গেছে।

অন্যদিকে ঝুট কাপড়ের উপর নিষেধাজ্ঞা না থাকার কারণে এই পণ্যের রপ্তানি অব্যাহত রয়েছে। মূলত: এই বন্দর দিয়ে এই দুটি পণ্যই ভারতে রপ্তানি করা হয়। এদিকে এই বন্দর দিয়ে নেপাল ও ভুটানের সাথে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। রপ্তানিকারক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এই বন্দর দিয়ে খুব বেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়না। তাই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব খুব বেশী পড়বেনা।

বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট লি: এর. ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ জানান, কাঁচামাল জাতীয় পন্য রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। পলিস্টার কটন রেকস বা ঝুট গতকালও রপ্তানি হয়েছে। শুধুমাত্র ফিনিস গুডস এর উপর নিষেধাজ্ঞা আছে।