ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরও ৯ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আ. স ম জামশেদ খোন্দকার এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের-এর কার্যালয় থেকে তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এ নিয়ে খুলনার ৬টি আসনে ১৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

প্রার্থীরা হলেন, খুলনা-১ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী আমীর এজাজ খান, খুলনা ২ আসনে খুলনা মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখার প্রার্থী মুফতী আমানুল্লাহ, খুলনা-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরী আমীর দাঁড়িপাল্লার প্রার্ধী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখার প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও খুলনা-৪ আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক ধানের শীষের প্রার্থী আজিজুল বারী হেলাল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ এস এম আজমল হোসেন। এর আগে গত ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর ৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তারা হলেন, খুলনা-৩ আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ধানের শীষের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শেখ আরমান হোসেন, খুলনা-৪ আসনে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব হাতপাখার প্রার্থী হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী মো. কবিরুল ইসলাম, খুলনা-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলি আসগার লবি।

খুলনা-৬ আসনে জেলা বিএনপি'র সদস্য সচিব (ভারপ্রাপ্ত) ধানের শীষের প্রার্থী এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ।

এদিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কেএমপি’র প্রেসকনফারেন্স কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় নির্বাচনে প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বলেন, কোনো প্রার্থী নিরাপত্তার জন্য আবেদন করলে তাকে আবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে তিনি কী ধরনের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। এরপর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা সিটিএসবি বিষয়টি তদন্ত করবে। তদন্তে হুমকির সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেয়া হবে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পূর্ববর্তী এক নির্বাচনে প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সর্বশেষ নির্বাচনে পুলিশের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লাখ। বাকি দায়িত্ব পালন করেছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, আনসার, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও বিজিবি। তিনি বলেন, “ইনশাআল্লাহ নির্বাচন বানচাল করার সক্ষমতা কারোর নেই। অন্তত আমার মহানগরে আমি এমন কিছু দেখছি না।”

তিনি আরও জানান, সরকার নজিরবিহীনভাবে নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। বুধবার সকালে খুলনায় নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের জন্য তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণে বডি অন ক্যামেরা ব্যবহার, যেকোনো পরিস্থিতিতে ভোট গ্রহণ বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ জন্য নির্দিষ্ট গাইডলাইন অনুসরণ করা হচ্ছে এবং প্রশিক্ষকরা পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি জানতে পেরেছেন যে নগরীতে তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এ বিষয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে।

ডিজিটাল অপরাধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধীদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। বর্তমানে অপরাধীরাও ডিজিটালভাবে আরও আধুনিক হয়ে উঠেছে। তারা সাধারণ ফোন ব্যবহার না করে হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড মাধ্যম ব্যবহার করছে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এরপরও পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।

সম্প্রতি আদালত পাড়ায় সংঘটিত হত্যাকা-ের বিষয়ে তিনি জানান, এ ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আপাতত বিস্তরিত প্রকাশ করা হচ্ছে না। দৃশ্যমান অগ্রগতি হলে তা গণমাধ্যমে জানানো হবে। এসময় কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এ- অপারেশন) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এ- প্রটোকল) মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) এস এম শাকিলুজ্জামান, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সহাকারি পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ত ম রোকনুজ্জামান প্রমুখ। এসময় স্থানীয় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।