টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে গেছে পানির নিচে। বুধবার রাতভর বৃষ্টি আর বৃহস্পতিবার ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টির ফলে নগরীর বহু সড়ক ও বাড়িঘরে পানি ঢুকে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
বিশেষ করে নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ, জিইসি, চকবাজার, জামালখান বাই লেইন, বাদুরতলা, আসকারদিঘী, ওয়াসা মোড় ও হাজীপাড়া এলাকাসহ বিভিন্ন নিচু অঞ্চলে হাঁটুসমান পানি জমে রয়েছে। বহদ্দারহাটের একটি মার্কেটের নিচতলায় সব দোকানে পানি উঠে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
সকালে অফিসগামী ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বেশি। জমে থাকা পানি পাড়ি দিয়ে পায়ে হেঁটে তাদের মূল সড়কে পৌঁছাতে হয়েছে। গণপরিবহন ছিল অপ্রতুল। সেই সুযোগে রিকশা ও সিএনজি চালকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
এদিকে সকাল ছয়টার দিকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি সড়কের স্টারশিপ ফ্যাক্টরি সংলগ্ন শীতলঝর্ণা খালের ওপরের একটি সেতুসহ সড়কের অংশ ধসে পড়ে যান চলাচল আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সেতুটি দিয়ে নগরের ২ নম্বর গেট থেকে অক্সিজেন যাতায়াত করেন লোকজন। নগরের অন্যতম প্রধান ও ব্যস্ততম সড়ক বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের ওপর অবস্থিত। নগরের ২ নম্বর গেট থেকে অক্সিজেনমুখী সড়কের ওপর থাকা সেতুর অংশ ভেঙে যায়। বর্তমানে এক পাশ দিয়ে সীমিত পরিসরে যান চলাচল করলেও সেটিও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান জানান, ১৯৮০ সালের দিকে নির্মিত এ সেতুটি বহুদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় শীতলঝরনা খাল সম্প্রসারণ করা হলে পানিপ্রবাহ বেড়ে যায়। কিন্তু খাল প্রশস্ত হলেও সেতুটি আগের নকশাতেই ছিল, ফলে পানির ধাক্কায় সেতুর দু'পাশের মাটি সরে গিয়ে দেয়ালে ফাটল দেখা দেয় এবং শেষপর্যন্ত ভারী বৃষ্টির চাপে ধসে পড়ে।
তিনি আরও জানান, সেতুটি সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে পাঁচ কোটি টাকার একটি প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে এবং দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত কাজ শুরু করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
ব্যস্ততম সড়কে এমন দুর্ঘটনায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও স্থানীয়রা। মোটরসাইকেল আরোহী আবুল মনসুর জানান, জরুরি কাজে যাওয়ার সময় মাঝপথে এসে দেখতে পান সেতু ভেঙে পড়েছে। ফলে ওই দিকের রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প পথে যেতে বাধ্য হন তিনি।
ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনকারী বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক শামসুল ইসলাম বলেন, সেতুর একটি পাশ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে, অন্য পাশ দিয়ে সীমিত যান চলাচল চলছে। তবে সেটিও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
বায়েজিদ এলাকার এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক যানবাহন চলাচল করে। এখানে রয়েছে বহু শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দ্রুত সেতুটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা জানান, ভোর ৪টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টির সঙ্গে ছিল জোয়ার। এ কারণে পানি দ্রুত নামতে পারেনি এবং জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ধসে পড়া সড়ক অংশে কালভার্টের পাশে গর্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আগেই নজরে আসে এবং মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই ওই অংশ খালের মধ্যে দেবে গেছে। করপোরেশনের প্রকৌশল দল ঘটনাস্থলে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত আমবাগান স্টেশনে ২৪ মিলিমিটার এবং ২৪ ঘণ্টায় ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পতেঙ্গায় একই সময়ে বৃষ্টি হয়েছে ৩২ মিলিমিটার।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল আলম জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টাও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতার জন্য মূলত খাল-নালার যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব দায়ী। তারা সিটি করপোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যাতে সময়মতো খাল-নালা পরিষ্কার রাখা হয় এবং নতুন করে দুর্ভোগ এড়ানো যায়।