আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কুষ্টিয়া- মেহেরপুর মহাড়কের সাড়ে ৬শ’কোটি টাকার চলমান সড়ক প্রকল্পের ৬০ কিলোমিটার রাস্তার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। কোথাও রাস্তার পাশে পরিমিত জায়গা নেই আবার কোথাও হাত দিয়ে টান দিলে উঠে আসছে বিটুমিন আর পাথর। আবার কোথাও পাওয়া গেছে নিম্নমানের ইট।

৬৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের চলমান কাজে দুদকের অভিযানে এমন চিত্রই ফুটে ওঠে। ৬৪৩কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে এসে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগ করে। ছয়টি প্যাকেজে ৬ জন ঠিকাদার কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত প্রায়ই ৬০ কিলোমিটার সড়ক পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করে প্রায় ৩ বছর আগে। শুরুর পর থেকেই এ কাজে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কেন্দ্রীয় অফিসেও এ ধরনের অভিযোগ জমা পড়ে।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে দুদক সমন্বিত কার্যালয় কুষ্টিয়ার কর্মকর্তারা গত সোমবার সরেজমিনে এসব অভিযোগ তদন্তে যান। দুদকের টিম চলমান প্রকল্পে নানা অনিয়ম দেখতে পান। এ সময় কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।অভিযান শেষে দুদক সমন্বিত কার্যালয় কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল জানান- তাদের কাছে অভিযোগ ছিল কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক পুনঃনির্মাণ কাজে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম হয়েছে। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। অভিযানে এসে তারা এর প্রমাণ পেয়েছেন।

তিনি বলেন- কাজের সিডিউল অনুযায়ী রাস্তার দুই পাশেযে দৈর্ঘেরশোল্ডার (জায়গা) থাকার কথা, অধিকাংশ স্থানে সেটি নেই। ফলে বর্ষা মৌসুমে রাস্তার দুইপাশ থেকে ভেঙে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া অনেক জায়গায় নিম্নমানের উপকরণ খুঁজে পেয়েছেন তারা। আবার কোথাও কোথাও বিটুমিন ও পাথরের মাত্রা ঠিক না হওয়াই হাত দিয়ে টান দিলে পিচ ওখোয়া উঠে আসছে।

তিনি বলেন, তারা কিছু উপকরণ সংগ্রহ করেছেন। এগুলো পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন চেয়ে দুদককেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলেও জানান দুদক সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল।

তবে অভিযানের সময় উপস্থিত কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী লিটন আহমেদ খান দুদক টিমের বক্তব্যের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন- সমস্ত নিয়মকানুন মেনে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পের সমস্ত কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাই দু’একটি জায়গায় সমস্যা থাকতে পারে। সেগুলো প্রকল্পের কাজ শেষ করার পূর্বেই ঠিক করা হবে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম জানিয়েছেন, ২০২২সেপ্টেম্বর মাস থেকে কুষ্টিয়া- মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্তকরণ ও সংস্কার কাজ শুরু হয়। একদফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। সর্বমোট ৬৪৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জহুরুল লিমিটেড কাজ বুঝিয়ে দেয়নি এখনো। তারা কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগে অভিযোগগুলো তদন্ত করে কাজ বুঝে নেওয়া হবে। অনিয়ম দুর্নীতি পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।