ওয়াসা ভবনে উত্তেজনা
খুলনা ওয়াসার ফেস-২ এর ২৫৯৮ কোটি টাকা প্রকল্পের সেই আলোচিত নির্বাহী প্রকৌশলীকে যোগদান পত্রের মাধ্যমে পিডি নিয়োগের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ নিয়োগ যোগদানের স্বাক্ষর করেছেন এমডি। এ দিকে আওয়ামী ঘরনার বিতর্কিত প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলামকে প্রকল্পের রুটিন দায়িত্ব হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ খুলনার নাগরিক নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতৃবৃন্দ। খুলনা সচেতন নাগরিক ফোরামের আহবায়ক মোজাহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আহমেদ হামিম রাহাত, শিক্ষক নেতা মুরাদ সোহাগ, নাগরিক নেতা মিনার মুসফিক, আরিফ মোল্লা, উজ্জ্বল, আবু জার, তারেক রহমান প্রমুখ। এ সময় নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর মো. রেজাউল ইসলামকে খুলনা ওয়াসার রুটিন পিডি নিয়োগ বাতিল না করলে আগামীতে খুলনার মানুষ পানির বন্ধসহ কঠিন কর্মসূচি গ্রহণ করবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, ২৪-এর গণ অভ্যুত্থানের পর ছাত্র জনতা তথা খুলনার নাগরিক সমাজ সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ করলেও তার কোনো তদন্ত না করে এবং শাস্তির আওয়তা না এনে উল্টো তাকে আড়াই হাজার কোটি টাকার উপরের এই বিশাল প্রকল্পের পিডি নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ জন্য নেতৃবৃন্দ বর্তমান ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, খুলনার আলোচিত শেখ বাড়ির এই দোসরকে কতো টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হলো তা জানতে চায়। নেতৃবৃন্দ জুলাই চেতনাকে সমুন্নত রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, প্রায় ২ হাজার প্রাণের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট বিতাড়িত হয়েছে। জুলাই যোদ্ধারা আমদের গর্ভ। কিন্তু কতিপয় জুলাই যোদ্ধা শহিদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করছে। কিছু অসাধু ব্যক্তি এই তদবির করে আওয়ামী ঘরনার প্রকৌশলীকে নিয়োগ দিয়েছে। অথচ ওয়াসার বিধি অনুযায়ী তিনি এ নিয়োগ পেতে পারেন না। আলোচিত এই প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম বিগত দিনে আইইবি নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু পরিষদের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। প্রচার রয়েছে কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে তিনি ওই নির্বাচন করেন। এদিকে তাকে পিডি হিসেবে রুটিন দায়িত্ব প্রদান করায় খুলনা ওয়াসা ভবনে গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে পিডির যোগদান পত্রে স্বাক্ষর করেছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান। তার আগে বেলা ২টার দিকে খুলনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের বহিষ্কৃত নেতা তারভীরের সঙ্গে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল খুলনা ওয়াসা ভবনে যান এবং পিডির যোগদান পত্রে স্বাক্ষর করতে চাপ সৃষ্টি করেন।
তার আগে গত ১১ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় এবং বর্তমান এনসিপি নেত্রী নুসরাত তাবাস্সুম ঢাকা থেকে খুলনা ওয়াসা ভবনে আসেন। খুলনা ওয়াসার বোর্ড সদস্য ছাত্র প্রতিনিধি ইব্রাহিম খলিল, এনসিপি নেতা অহিদুজ্জামান তাদের সঙ্গে ছিলেন। মাত্র কয়েক মিনিট দেখা করে পিডি নিয়োগের জন্য একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানের ব্যবস্থা করা হয়। ওই পত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পৌঁছানোর দুই ঘণ্টার মধ্যে কয়েক কর্মকর্তার হাত ঘুরে তা স্বাক্ষর হয়। অথচ গত ৯ নভেম্বর খুলনা ওয়াসার বর্তমান এমডির নিয়োগ হলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র পান গত ৯ ডিসেম্বর। আর এমডি যোগদান করেন ১০ ডিসেম্বর। একজন এমডি নিয়োগ এবং যোগদানে লেগে যায় একমাস। অথচ মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পিডি নিয়োগ হয়, এটি আশ্চর্যের বিষয় বলে মনে করেন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এডভোকেট মো: বাবুল হাওলাদার। নাগরিক নেতৃবন্দ মনে করেন, নুসরাত তাবাসসুম জাদুতে ফাইল নড়েছে ঝড়ো গতিতে। প্রচার রয়েছে খুলনা ওয়াসার তরুণ এক বোর্ড সদস্য বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে এই নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে।
এদিকে, খুলনা ওয়াসার পিডি নিয়োগের বিষয়টি জানতে চাইলে এমডি মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান বলেন, তিনি যোগদানের আগেই মন্ত্রণালয়ে এটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আমি খুলনা ওয়াসার লোকবল অনুযায়ী ৪ জনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এটি সম্পূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। তার নিজের কোনো করণীয় নেই। তবে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি এখনও আমার নজরে আসেনি। আসলে ব্যবস্থা নেবো।