তৌফিক রুবেল, দাউদকান্দি (কুমিল্লা) : প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির এই যুগে, যেখানে খবরের জন্য অনলাইন পোর্টাল, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা ইউটিউব চ্যানেলের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে বহুগুণ, সেখানে এখনও কিছু মানুষ আছেন, যারা প্রতিদিন সকালে মুদ্রিত সংবাদপত্রের গন্ধে দিন শুরু করেন। দাউদকান্দি পৌর বাজারের প্রবীণ হোমিও চিকিৎসক মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ তাদের মধ্যে একজন।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, টানা প্রায় ৩৮ বছর ধরে তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে পড়ছেন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক সংগ্রাম’। গিয়াসউদ্দিন আহমেদের বয়স এখন ৭০ ছুঁইছুঁই। জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় তিনি সংবাদপত্রের সঙ্গেই কাটিয়েছেন। তার চিকিৎসা চেম্বারের একটি কোণজুড়ে সুন্দরভাবে সাজানো পুরনো পত্রিকার স্তূপ যেন সাক্ষ্য দেয় সেই দীর্ঘ যাত্রার। তিনি বলেন, ‘১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে প্রথম সংগ্রাম হাতে নেই। তখন হয়তো বুঝিনি এটা আমার জীবনের অংশ হয়ে যাবে। কিন্তু প্রতিদিন সকালে পত্রিকা হাতে না পেলে যেন দিনটাই অসম্পূর্ণ মনে হয়।

গিয়াসউদ্দিন আরও জানান, তার জন্য সংবাদপত্র পড়া শুধু খবর জানার মাধ্যম নয়, এটা জীবনের অংশ, প্রতিদিনের প্রেরণা। অবশ্য এই পত্রিকা রাখার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের হাতে একবার নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে তাকে। তবে ২০২৪ এর ৫ আগস্ট এর ২য় স্বাধীনতার পর এগুলো আর মনে রাখার প্রয়োজন মনে হয়নি। গত ৩৮ বছরে বাংলাদেশ ও বিশ্বের অসংখ্য ঘটনা জানার জন্য সংগ্রাম পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়েছেন তিনি। গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈশ্বিক রাজনীতি থেকে প্রযুক্তির বিপ্লব-সব কিছুর খবর সযত্নে রেখেছেন মনের ভাজে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা তিনি এখনও সংরক্ষণ করে রেখেছেন।

পত্রিকার পাতায় শুধু খবর থাকে না, থাকে সময়ের দলিল। আমি মনে করি এই পত্রিকা আমার জীবনেরও দলিল হয়ে গেছে, বলেন ডা: গিয়াসউদ্দিন। দাউদকান্দি বাজারে তার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কেন্দ্র বেশ জনপ্রিয়। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি বই পড়া ও জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী। তার চেম্বারে গেলে বই, পুরোনো পত্রিকা ও নানা বিষয়ক প্রবন্ধে ভরা তাক চোখে পড়ে। তিনি রোগীদের শুধু ওষুধ দেন না, অনেক সময় বই-পত্রিকা পড়ারও পরামর্শ দেন।

প্রযুক্তির যুগে অনেকেই মুদ্রিত পত্রিকা পড়া ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু গিয়াসউদ্দিনের মতে, মুদ্রিত সংবাদপত্র তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রকাশ করে, যা মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা তৈরি করে। ফেসবুক বা অনলাইনে অনেক খবর আসে, কিন্তু সেগুলো সবসময় নির্ভুল হয় না। সংবাদপত্র পড়লে মানুষের চিন্তাশক্তি বাড়ে, বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা তৈরি হয়। তাই আমি তরুণদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।

গিয়াসউদ্দিন আহমেদের মতো পাঠকরা সমাজে খুব বেশি নেই। তিনি শুধু নিজের অভ্যাসের কারণেই নয়, সমাজে এক ধরনের বার্তা দিচ্ছেন-জ্ঞানচর্চা চিরকালীন, সেটা প্রযুক্তির যেকোনো যুগেই হোক না কেন। তার দীর্ঘদিনের ভালোবাসা দাউদকান্দির মানুষের কাছে প্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গিয়াসউদ্দিন আহমেদের চেম্বারে সারাদিন ই বিভিন্ন মতের-শ্রেণীর লোকজন পেপার পড়তে আসেন। ওনি বাসায় দুপুরে খেতে গেলেও কখনো দোকান বন্ধ করে যান না। সেই সময়ে অনেক মানুষই এখানে বসে পেপার পড়তে থাকে। তেমনি একজন নিয়মিত পাঠক হলেন তুজারভাঙ্গা গ্রামের সন্তান মো. আব্দুল্লাহ বলেন, আমি আজকে অনেক বছর যাবত এখানে পেপার পড়ি ডাক্তার সাহেবের ফার্মেসিতে বসে। আমার সাথে সবসময় আন্তরিকতার সহিত আচরণ করেন এবং ডাক্তার সাহেবের কাছ থেকে কখনো কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া পাই নি। ¯’ানীয় আরেকজন তরুণ দন্ত চিকিৎসক আব্দুল মুক্তাদির বলেন, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ একজন সচেতন নাগরিকের প্রতি”ছবি। এলাকার মানুষ তাঁকে চিকিৎসক হিসেবে যেমন সম্মান করেন, তেমনি একজন প্রজ্ঞাবান পরামর্শদাতা হিসেবেও মানেন।উল্লেখ্য যে ,গিয়াসউদ্দিন সাহেবের জন্ম¯’ান হলে দাউদকান্দি উপজেলার পাচঁগাছিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলী গ্রামের খন্দকার বাড়িতে। তিনি এখন দাউদকান্দি পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডেই নিয়মিত চেম্বার করেন এবং এই ওয়ার্ডেই তিনি বাড়ি করেছেন।