খুলনায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের দাবিতে খুলনা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, কেসিসি প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকারের নিকট মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় নগর ভবনে প্রদান করা হয়।

খুলনা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আ ফ ম মহসীন এবং সদস্য সচিব এডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার এ স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিজামুর রহমান লালু, মিজানুর রহমান বাবু, সরদার আবু তাহের, এস এম দেলোয়ার হোসেন, এস কে তাসাদুজ্জামান, জামাল মোড়ল, মিলন বিশ^াস, রহমত আলী, শাহীন হাওলাদার, এস এম রোহান প্রমুখ।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, খুলনায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে পেট্রোবাংলার অধীন সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ভেড়ামারা হতে খুলনায় পাইপ লাইন বসানোর কাজ শুরু করে ২০১২ সালে। এ প্রকল্পের আওতায় ভেড়ামারা হতে খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপ বসানোর পর কর্তৃকপক্ষ একটি খোড়া যুক্তিতে উক্ত প্রকল্প পতিত ঘোষণা করে পরবর্তীতে পাইপসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে পেট্রোবাংলার উদাসীনতাই মূলত দায়ী। এ প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় হলেও মজার ব্যাপার কর্তৃপক্ষকে কোনো প্রকার জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হয়নি। পরবর্তীতে ভোলা-বরিশাল-খুলনা রুটে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্তে এ অঞ্চলের মানুষ পুনরায় আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু এ প্রকল্পের আওতায় ভোলা-বরিশাল সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বেশকিছু কাজ এগোনোর পর অকস্মাৎ চলতি বছরের ৫ মার্চ পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের এক স্বাক্ষরে এ প্রকল্প স্থগিত করে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা রুটে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সিদ্ধান্তের সংবাদ এ অঞ্চলের মানুষকে মারাত্মকভাবে আহত করে। সম্ভাবনাময়ী এ অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকান্ড বিশেষ করে শিল্পোৎপাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনার সম্ভাব্য উন্মোচিত দ্বার বন্ধ হয়ে যায়।

স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো লোকসানের অজুহাতে রাতের অন্ধকারে তৎকালীন সরকার তাদের পেটোয়াবাহিনী দ্বারা একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বন্ধ করে দেয়। এর পূর্বাপর আরো অনেক ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্প বন্ধ করে শিল্পনগরী খুলনাকে বিরাণভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। খুলনায় ন্যূনতম ইন্ডাস্ট্রিয়াল কানেকশনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে পারলে বন্ধ কারখানাগুলোর যান্ত্রিক ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে, গ্যাসের ব্যবহার উপযোগী করে পতিত থাকা বিপুল পরিমাণ ভূমি এবং অবকাঠামো, সাথে সাথে বিকেল অংকের বেতন-ভাতা প্রাপ্ত জনবল কাজে লাগিয়ে এগুলোকে লাভজনক খাতে পরিণত করা সম্ভব। এখানে রয়েছে দেশের ২য় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। পদ্মাসেতু নির্মাণ হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থারও অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখযোগ্য। খুলনায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার যে সুযোগ তৈরি হবে, তাতে করে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা, বাড়বে ব্যক্তি উদ্যোক্তাও। গ্যাস না থাকার কারণে এ অঞ্চলে বিনিয়োগে উৎসাহ নেই শিল্প উদ্যোক্তাদের।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, একটি দেশের টেকসই জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে দেশের অভ্যন্তরের সকল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে সুপরিকল্পিতভাবে। উন্নয়ন হতে হবে সুষম। ছোট আয়তন এবং সীমিত সম্পদ বিবেচনায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। খুলনায় শিল্প-কারাখানা গড়ে উঠলে বা বন্ধ শিল্প-কারখানা চালু হলে শুধুমাত্র খুলনার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাই হবে না, কমবেশি এ সুবিধা ভোগ করবেন সমগ্র দেশের মানুষ। খুলনায় উৎপাদনের চাকা সচল হলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতেও। সুতরাং খুলনায় গ্যাস সরবরাহ এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি কোনো দয়া বা করুণার বিষয় নয়। এটি জাতীয় উন্নয়নের প্রশ্ন। সম্ভাবনাময়ী একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে অবহেলিত-বঞ্চিত রেখে, উন্নয়নের মূল ধারা থেকে পাশ কাটিয়ে রেখে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সীমিত ভূমি ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই হবে। শুধুমাত্র রাজধানী বা ঢাকা কেন্দ্রিক সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা মারাত্মক বৈষম্যমূলক তাই-ই না, এটি উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অপরিপক্কতা এবং অদূরদর্শিতার পরিচায়ক বলেই আমরা মনে করি। যদিও আবহমানকাল ধরে এ দূষণীয় চর্চাটি চলে আসছে। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন জনগণের প্রত্যাশার সরকারের নিকট থেকে আমরা কোনো ভাবেই এমনটা আশা করিনা।