যশোর সংবাদদাতা: দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা ও জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশের বিভিন্ন জেলায় গণশুনানি আয়োজন করে আসছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয় দুদকের গণশুনানি, যা পরিণত হয় এক উন্মুক্ত নাগরিক মঞ্চে। এখানে দুর্নীতির শিকার সাধারণ মানুষ সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাচ্ছেন, আর সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা দিচ্ছেন জবাব।
গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কমিশনার (তদন্ত) মিয়া আলী আকবর আজিজী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহান, জেলা পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তবৃৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা।
শুরু থেকেই ভুক্তভোগী মানুষদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। যশোরের সাধারণ নাগরিকরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, খাদ্য, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, বিআরটিএ, এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় ভুমি আফিস, সাবÑরেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। যশোর জেনারেল হাসপাতালের ওষুধ চুরি, খাবার সরবরাহের অনিয়মসহ নানা অভিযোগ উঠে আসে।
অভিযোগ উত্থাপনের পর অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন এবং প্রসঙ্গিক কাগজপত্র উপস্থাপন করেন। দুদক কর্মকর্তারা মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি বক্তব্য শুনেন এবং লিখিতভাবে নথিবদ্ধ করেন। দুদক চেয়ারম্যান জানান, গণশুনানিতে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে। যেসব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই দুদকের আইনি বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনগণের অংশগ্রণই সবচেয়ে বড় শক্তি। এই গণশুনানিগুলো জনগণের আস্থা ও প্রশাসনের স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
গণশুনানিতে অংশ নেওয়া নাগরিকরা জানান, দুদকের এ উদ্যোগ তাঁদের আশার সঞ্চার করেছে। তারা মনে করেন, এ ধরনের সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ দুর্নীতিবাজদের জন্য এক ধরনের সতর্কবার্তা এবং সৎ কর্মকর্তাদের জন্য উৎসাহ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, দুদকের গণশুনানি একটি উদাহরণযোগ্য উদ্যোগ। এতে প্রশাসনের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পায় এবং জনগণ তাদের সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে পায়।
পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে এক ইতিবাচক মনোভাব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার পরিবেশ বিরাজ করে। জনগণ ও প্রশাসনের এ সেতুবন্ধনকে অনেকেই দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথচলার বাস্তব দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন।
দুদকের এই গণশুনানি প্রমাণ করে যখন রাষ্ট্রের সংস্থাগুলো জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়, তখনই সুশাসন ও জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি হয়। যশোরের মানুষ বিশ্বাস করছে, এই উদ্যোগ দুর্নীতিবিরোধী সংগ্রামে নতুন দিক উন্মোচন করবে এবং অন্য জেলার জন্যও প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।