মোংলা সংবাদদাতা: খুলনা-মোংলা মহাসড়ক পরিণত হয়েছে এক মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির যথাযথ সংস্কার না হওয়া, পাশাপাশি নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কটি এখন চলাচলের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অবহেলা ও যথাযথ তদারকির অভাবের ফলে হাজার হাজার মানুষ এবং যানবাহন প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এ মহাসড়ক ব্যবহার করছে।

মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনাকে সংযুক্ত করা এই সড়কটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের একটি প্রাণকেন্দ্র। মোংলা বন্দরে আমদানি-রপ্তানী পণ্য পরিবহনসহ স্থানীয় ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের একমাত্র স্থলপথ হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। তবে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অবহেলার কারণে এ মহাসড়কটির অবস্থা দ্রুত শোচনীয় হয়ে উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বর্ষা মৌসুমে বিশেষ করে বৃষ্টির কারণে সড়কটি অচল হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে মেরামত কার্যক্রম না হওয়ায় রাস্তার বিভিন্ন অংশে বড় ছোট গর্ত ও খানাখন্দ বেড়েছে। গত ১২ জুলাই, এই সড়কের ভাগা বাজার এলাকায় বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (ইঅটঊঞ) এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী কায়সান কবীর একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল একই মহাসড়কের খানাখন্দে পড়ে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে। এই করুণ ঘটনা সড়কের বেহাল দশার একটি স্পষ্ট নমুনা হিসেবে স্থানীয়দের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রতিবার সামান্য সংস্কার হলেও তা অল্প সময়ের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। এতে যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগ ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।

সড়কের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, রাতের বেলায় যেখানে কোনো ল্যাম্পপোস্ট বা আলোর ব্যবস্থা নেই, সেখানে অন্ধকারে যানবাহন চলাচল আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেলসহ ছোটবড় যানবাহনের মাঝে দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে।

খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশে যেমন কুদির গাছতলা মোড়, লকপুর এলাকা, কাটাখালি মোড়, শ্যামবাগাত, চুলকাঠি, ফয়লা বিমানবন্দরের সামনের রাস্তা, ভাগা, ঝনঝনিয়া ও জিরোপয়েন্টের দুই পার্শ্বে গর্ত-খানাখন্দে ভরা। এ অবস্থায় সড়ক ব্যবহারকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন।

চালক রিপন বলেন, “সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে যায়। ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে কয়েকদিনের মধ্যেই সংস্কারকৃত রাস্তা ভেঙে যায়। এতে গাড়ির যন্ত্রাংশ ও টায়ারের ব্যাপক ক্ষতি হয়।” অন্য চালক হানিফও একই কথা জানান।

প্রতিদিন মোটর খুলনায় যাতায়াত করা হাসান আলী জানান, “নিয়মিত মেরামত কাজ হলেও ভারি যানবাহনের চাপের কারণে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় মোটরসাইকেল নিয়ে গর্তে পড়ে গেলে পেছন থেকে আসা বড় যানবাহনের ধাক্কায় প্রাণহানির শঙ্কাও থাকে।” একজন পথচারী আলতাফ বলেন, “এই সড়ক ব্যবহারে সময় নষ্ট হচ্ছে, গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত স্থায়ী মেরামতের মাধ্যমে সড়কটির অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য আহ্বান জানাই।”

বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম দৈনিক সংগ্রামকে জানান, “বর্ষার টানা এক মাস বৃষ্টির কারণে বটতলা থেকে দিগরাজ পর্যন্ত সড়ক খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাগেরহাট সড়ক বিভাগের একটি ট্রাক দিয়ে সংস্কার কাজ চলছে এবং কিছু অংশের সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাকি অংশের সংস্কার কাজ শেষ হবে।” তিনি আরও বলেন, “দিগরাজ থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত সড়কের দায়িত্ব মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের।” স্থানীয় ও শিল্পাঞ্চলের জনসাধারণ দ্রুত ও স্থায়ী সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, সড়কটি দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই অবিলম্বে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে দুর্ঘটনা কমে এবং যান চলাচল নিরাপদ হয়।