খালিদ হাসান সিপাই, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় শহরের মধ্যখানে পাঁচ কিলোমিটার রেলপথের ছয়টি রেলক্রসিং রয়েছে। এ রেলপথ ব্যবহার করে কুষ্টিয়া-গোয়ালন্দ ঘাট ও কুষ্টিয়া-ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা রুটে দৈনন্দিন অন্তত আটটি ট্রেন শহর অভ্যন্তর দিয়ে চলাচল করে। এ সময় পাঁচটি রেলক্রসিং ফাঁদে আটকে পড়ে যানজটে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শহরবাসীকে। এদিকে রেলপথ স্থানান্তরে শহরবাসী দাবি ওঠালেও তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কেউই কর্ণপাত করছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতার রানাঘাট থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার রেলপথ চালু হয়। ‘জগতি স্টেশন’টি দেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন। পরবর্তীকালে ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর গোয়ালন্দ পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ সম্প্রসারিত হয়। জগতি স্টেশন থেকে শহরের মধ্যখান দিয়ে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত রেলপথসহ কুষ্টিয়া-গোয়ালন্দ রুট স্থাপিত। এই রুটে শহরের মধ্যখানে রয়েছে রেলওয়ে কোর্ট ও বড় স্টেশন নামক স্টেশনসহ ছয়টি রেলক্রসিং।
স্থানীয়রা জানান, কুষ্টিয়া-গোয়ালন্দ ঘাট, কুষ্টিয়া-খুলনা ও রাজশাহী রুটে শ্যাটল ট্রেন, নকশিকাঁথা মেইল, বেনাপোল এক্সেপ্রেসসহ দ্রুতগামী ইন্টারসিটি ট্রেন চলাচল করে। ফলে ট্রেন প্রবেশের অন্তত ১০ মিনিট আগে একযোগে বন্ধ থাকে শহরের জনাকীর্ণ এলাকা মজমপুর গেট রেলক্রসিং, কোর্ট স্টেশন, বড় রেলওয়ে স্টেশন ক্রসিং, বাবুর আলী রেলগেট, মতি মিয়ার রেলগেট ও মিলপাড়া রেলক্রসিং। এ সময় কোর্ট স্টেশন থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার, মজমপুর রেলগেট সংলগ্ন কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার, জেলার বৃহৎ পাইকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বড় বাজার রেলগেট ও বাবুর আলী রেলক্রসিংয়ে সৃষ্টি হয় দুঃসহ যানজট। এতে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজের শহরবাসীকে পোহাতে হয় মারাত্মক দুর্ভোগ। এছাড়া গন্তব্যে পৌঁছতে বিলম্বের পাশাপাশি তাড়াহুড়ায় রেলক্রসিং ফাঁদে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। অসহনীয় এই যানজট নিরসনে রেলওয়ে বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের নেই কোনো উদ্যোগ। ফলে রেলক্রসিং ফাঁদে দৈনন্দিনের যানজট তীব্রতায় নাকাল শহরবাসী।
শহরের কোর্টপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর খান এ করিম জানান, শহরের তীব্র যানজট নিরসনে রেললাইন স্থানান্তর এখন সময়ের দাবি। যানজটমুক্ত শহর গড়তে রেলপথসহ ছয়টি রেলগেট স্থানান্তরের কোনো বিকল্প নেই।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার জানান, শহরের মধ্যখানে বহুপূর্বে রেলপথ স্থাপিত হলেও সম্প্রসারিত ও জনবহুল শহরবাসীর স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলে রেললাইন সরিয়ে নেওয়ার দাবি উঠেছে। যানজট নিরসনে শহরের বাইরে রেল প্রতিস্থাপনের ওপর তিনিও গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কুষ্টিয়া-৩ আসনের নমীনী মুফতি আমীর হামজা জানান, কুষ্টিয়া শহরকে যানজটমুক্ত করতে হলে রেল লাইন স্থানান্তরের কোন বিকল্প নেই। আমরা আগামীতে ক্ষমতায় গেলে এ সমস্যার সমাধানে কুষ্টিয়া শহরের ভীতর দিয়ে চলমান রেল লাইনকে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের পাশ দিয়ে স্থাপন ও আধুনিক রেল স্টেশন করবো ইনশাআল্লাহ।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সোহাগ রানা জানান, রেলওয়ের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে চতুর্থ ফেজ-এ (২০৩০/৩৫ সাল) কুষ্টিয়া শহরের অভ্যন্তরের রেলপথ স্থানান্তর করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৭ জুলাই তৎকালীন রেলপথ ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী কুষ্টিয়ায় সফরে এসে রেলওয়ের কোর্ট স্টেশন আকস্মিক পরিদর্শন করেন। এ সময় স্টেশনে উপস্থিত শত শত জনতা শহরের মধ্যখান থেকে রেলপথ স্থানান্তরের দাবি তোলে। ফলে জনতার দাবিতে তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী তাৎক্ষণিক রেলওয়ের মহাপরিচালকে মোবাইল ফোন করে সরেজমিন ঘুরে কুষ্টিয়া শহরের মধ্যখান থেকে রেলপথ স্থানান্তরে ডিপিপি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ভূমি জরিপসহ প্রাথমিক সমীক্ষা শুরুর পর তা আর এগোয়নি।