খুলনায় একের পর এক নৃশংস হত্যাকান্ডে সংগঠিত হলেও মূল আসামিরা ধরা পড়ছে না। ফলে হত্যাকান্ড বন্ধও হচ্ছে না। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ঘুমিয়ে থাকা যুবক তানভীর হাসান শুভকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এসব নিয়ে আতঙ্ক ও উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকার মানুষ।
খুলনা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মহেশ্বরপাশা এলাকাটি দৌলতপুর থানা এলাকায় পড়েছে। এলাকাটি এক সময় চরমপন্থি অধ্যুষিত ছিল।
গত বছর অভ্যুত্থানের পর পুরানো সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের লেনদেনে পরিবেশ সংঘাতময় হয়ে ওঠে। এর মধ্যেই গত ১১ জুলাই মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়া নিজ বাড়ির সামনে বহিস্কৃত যুবদল নেতা মাহাবুবুর রহমান মোল্যাকে গুলী করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। ফিল্মি স্টাইলে সংগঠিত ওই হত্যাকান্ডের তদন্তে চরমপন্থি সংগঠনের বিরোধের বিষয়টি উঠে আসে। এ ঘটনায় ওই মাসেই ৪ জনকে আটক করা হয়। গত দুই মাসে হত্যাকান্ডে জড়িত আর কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ও দৌলতপুর থানার ওসি (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম জানান, হত্যাকান্ডের এ পর্যন্ত ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।
গত ৩ আগস্ট রাতে মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া খানাবাড়ি এলাকায় আল আমিন নামে এক ঘের ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাত ৯টার দিকে রাস্তার ওপর তার মরদেহ ফেলে রেখে যায় তারা। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদি হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। দুই মাস অতিবাহিত হলেও হত্যাকান্ডে জড়িত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দৌলতপুর থানার এস আই আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
নিহত যুবদল নেতা মাহবুবের বাবা ও হত্যা মামলার বাদি আব্দুল করিম মোল্যা বলেন, তিন মাস পার হলো এখন পর্যন্ত প্রকৃত আসামি ধরা পড়েনি। বরং আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। রাতে ভয়ে আমরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না। এরই মাঝে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী শুভ নামে আরেকটি ছেলেকে দুর্বৃত্তরা গুলী করে হত্যা করেছে। সব মিলিয়ে আমরা এলাকাবাসী খুবই ভয় এবং আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, দ্রুত এসব অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।
নিহত আল আমিনের বড় ভাই ও মামলার বাদি মো. আওলাদ হোসেন বলেন, প্রায় তিন মাসের ব্যবধানে একই এলাকায় তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকাবাসী মারাত্মকভাবে আতঙ্কিত। আমার ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যার অপরাধীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সব মিলিয়ে আমরা ভয়, আতঙ্ক এবং হতাশার ভিতর দিন কাটাচ্ছি। প্রশাসনের কাছে দাবি প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।