খুলনার অধিকাংশ ভবনের জুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড খুলে ফেরা হয়েছে। ২৬টি জুঁকিপূর্ণ ভবনের ২৩টিই এখনো ভাঙা হয়নি বলে জানা গেছে। এ সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে এখানের বাসিন্দারা। ২০১৫ সালের ২৭ জুন নগরীর আহসান আহমেদ রোডে জরাজীর্ণ ভবনধসে আবিদা আরিফিন শাপলা নামের এক স্কুলছাত্রী মারা যায়। এরপরেই টনক নড়ে জেলা প্রশাসনের। তড়িঘড়ি সভা করে ইতোপূর্বে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা সব ভবন ভেঙে ফেলার নোটিশ দেওয়া হয়। কেসিসিও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চিঠি দেয়। এরপর একদশক পার হয়ে গেছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা ২৬টি ভবনের ২৩টি এখনও ভাঙা হয়নি। গত বছর নতুন করে আরও ৫টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে কেসিসি গঠিত কমিটি। এর মধ্যে ভাঙা হয়েছে মাত্র দুটি। জরাজীর্ণ বাকি ভবনগুলোতে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বসবাস এবং ব্যবসা বাণিজ্য করছে অসংখ্য মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে কেসিসির লাগানো সাইনবোর্ড অনেকে খুলে ফেলেছেন।

কেসিসি থেকে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৪ জুন নগর ভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে কেসিসি, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(কেডিএ), গণপূর্ত বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে কেডিএর পক্ষ থেকে ৯৪টি ও কেসিসির পক্ষ থেকে ৫৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা জমা দেওয়া হয়। পরের সভায় ওই ১৫৩টি ভবন থেকে প্রাথমিকভাবে ৪৮টি ভবনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। ওই বছরের ২৯ আগস্ট ২৬টি ভবন সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা, ১৭টি ভবনের নিচতলা রেখে বাকি অংশ ভেঙে ফেলা ও পাঁচটি ভবনের স¤প্রসারিত অংশ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ভবন ভেঙে ফেলতে দুই মাসের সময় দিয়ে নোটিশও দেওয়া হয়। কিন্তু পরে এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম আর এগোয়নি। এরপর ২০১৩ সালে ফের নোটিশ দিয়ে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভবন অপসারণে ব্যর্থ হলে স্থানীয় সরকার আইন (সিটি করপোরেশন) ২০০৯ অনুযায়ী (করপোরেশন ভবন ভেঙে দেবে এবং এর খরচ মালিককে বহন করতে হবে) ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সে সময়ও এ নোটিশ পর্যন্তই সব। স¤প্রতি ২০টি ভবনের একটি তালিকা করপোরেশনের কাছে জমা পড়ে। এর মধ্যে পাঁচটি ভবনের জরিপ শেষে পাঁচটিকেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় যোগ করা হয়।

কেসিসি কর্মকর্তারা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার প্রধান অন্তরায় হচ্ছে ভবনের মালিকানা। ২০১০ সালে যে ২৬টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার ২১টির মালিকানা ছিল জেলা প্রশাসনের। একটি গণপূর্ত বিভাগের। ব্যক্তি মালিকানা ৪টি ভবনের তিনটি ভাঙা হলেও জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন ভবনগুলো ভাঙা হয়নি।

নগরীর বড় বাজার এলাকার ক্লে রোডে গিয়ে দেখা গেছে, ২৬ নম্বর ভবনটি শত বছরের পুরোনো। এই ভবনের নিচতলায় বর্তমানে ১০-১৫টি দোকান। কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে। হেলাতলা মোড়, ওয়েস্ট মেকট রোড, বাজার রোডের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর অধিকাংশের অবস্থা নাজুক।

সিটি করপোরেশনের পূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো কেডি ষোষ রোড, হেলাতলার মোড়, ক্লে রোড, ওয়েস্ট মেকট রোড, কালীবাড়ি রোড, ভৈরব স্ট্র্যান্ড রোড, তুলাপট্টি, পিসি রায় রোড, পুরাতন যশোর রোড, ধর্মসভা রোড, শের-ই বাংলা রোড, স্যার ইকবাল রোড, বানিয়াখামার রোড, সিমেট্রি রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড ও খালিশপুর হাউজিং এস্টেটে অবস্থিত।

এ ব্যাপারে কেসিসির এস্টেট অফিসার গাজী সালাউদ্দিন বলেন, পুরাতন তালিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে। গত বছর ৫টি ভবন নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে দুটি ভাঙা হয়েছে। আরেকটি ভাঙার কাজ চলছে।