খুলনাঞ্চলে ফিটনেসবিহীন যানবাহন নামিয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জরাজীর্ণ পুরনো, নড়বড়ে বাসগুলোতে দেয়া হচ্ছে নতুন রঙের প্রলেপ, চলছে টুকটাক মেরামতের কাজও। এসব সংস্কার কাজের পর বাসগুলোকে নতুন দেখালেও বাস্তবে সেগুলো ফিটনেসবিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণই থেকেই যাচ্ছে। খুলনার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সোনাডাঙ্গায় গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে ফিটনেসবিহীন বাস সংস্কারের এ সব দৃশ্য।

বিআরটিএ খুলনার আঞ্চলিক কার্যালয়ের ১৩ মার্চ দেয়া তথ্য মতে, খুলনাতে ১৮৩টি বাস, ৮১টি এ্যাম্বুলেন্স, ৭২২টি কারসহ ৭ হাজার ২৮৯টি ফিটনেসবিহীন যানবাহন রয়েছে। এছাড়া ঢাকাসহ অন্য স্থান থেকে আসা যানবাহন তো খুলনাঞ্চলে যাতায়াত করেই।

সূত্রে জানা গেছে, সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মোট ৫২টি রুটে দুই সহস্রাধিক বাস চলাচল করে। ঈদ সামনে রেখে পুরনো বাস মেরামতের হিড়িক পড়েছে খোদ বাস টার্মিনালের ওয়ার্কশপ গুলোতেই।

বাস মেরামতের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, পুরনো ধাতব পাত সরিয়ে নতুন করে বডির ঝালাই করা হচ্ছে, এরপর রং করে আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। ফলে বাহ্যিকভাবে বাসগুলোকে নতুন মনে হলেও আসলে এগুলো পুরনো ও নড়বড়ে।

ওয়ার্কশপের শ্রমিকরা আরও জানান, ঈদের আগে ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে প্রচুর পুরনো বাস মেরামতের কাজ চলছে। গাড়ির ইঞ্জিনের সমস্যা, বডিতে মরিচা পড়া, সিট কভারের ক্ষতি ইত্যাদি ঠিক করে নতুন রূপ দেয়া হচ্ছে। মেরামতের পর বোঝার উপায় থাকে না যে গাড়িগুলো আগে ভাঙা চোরা অবস্থায় ছিল।

যাত্রীদের অভিযোগ, বাহ্যিকভাবে চকচকে দেখালেও এসব পুরনো বাসের প্রকৃত অবস্থান ভেতরে লুকিয়ে থাকে। ফলে ঈদযাত্রায় ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এসব লক্কর-ঝক্কর বাস নিয়ন্ত্রণে না আনলে ঈদের সময় দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়তে পারে।

সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে কয়রাগামী যাত্রী হাফেজ মজিবুল্লাহ্ বলেন, কয়রা-পাইকগাছা রুটে যত্তোসব লক্করÑঝক্কর বাসগুলোই চলাচল করে। মনে হয় যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটবে।

ফিটনেসবিহীন এসব বাস রাস্তায় নামলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকবেন যাত্রীরা। বিআরটিএ ও আইনশৃক্সখলা বাহিনী জানিয়েছেন, যদি কোনো বাস ফিটনেস ছাড়াই চলাচল করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিআরটিএ খুলনার বিভাগীয় পরিচালক প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান বলেন, প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে করতে ফিটনেসবিহীন ও রেজিস্ট্রেশনহীন যানবাহন সড়কে নামলেই আটকে দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নাগরিক সমাজ খুলনার সদস্য সচিব এডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, প্রশাসনের যথাযথ নজরদারি থাকলে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যাত্রীরা নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে চাইলে এই ধরনের অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করতে হবে।